মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, ঘাতকের নিঃশ্বাস কি বঙ্গবন্ধু অনুভব করতে পেরেছিলেন? ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস’ যিনি নিজেই জনসভায় আবৃত্তি করতেন, তিনি কি টের পাওয়ার সময়টুকু পেয়েছিলেন যে, ঘাতকরা যে কোনো সময়, যে কোনো মুহূর্তেই আঘাত হানবে? বিশ্বাস তো ছিল তার প্রখর যে, কোনো বাঙালি তাকে হত্যা দূরে থাক, আঘাত করার মতো মানসিকতা রাখে না।
একাত্তরের যুদ্ধের ফলাফলে বাঙালির চিন্তা-চেতনায় তলে তলে তখন অনেকটাই পরিবর্তন এসে গেছে- এমনটা তার ভাবনায় আসেনি। সোচ্চারে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করনি’র বিপরীতে বাঙালি তার মানুষ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ করে বলেছিলেনও। মনুষ্যবিবর্জিত কোনো কর্মকান্ড বাঙালি করতে পারে কল্পনায়ও আসেনি, মনেও নয়। অথচ বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, স্বার্থান্বেষী মহল, ক্ষমতালিপ্সু ও বিদেশি শক্তি তখনো শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস করে অস্ত্র শানিয়ে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রের নানা ঘোঁট পাকিয়ে। যদিও প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত, ধ্বংসস্তূপাকীর্ণ দেশকে আবার পূর্ণতার পথে এগিয়ে নেওয়া। করেছেনও তাই।
দেশজুড়ে নানা রকম অস্থিরতা, অরাজকতার যে ডালপালা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তা নিরসনের পদক্ষেপগুলো তত দিনে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিও দিলেন। সবকিছু সুনসান হয়ে ওঠার মুহূর্তগুলো ধরা দিতে থাকে ক্রমশ। দেশে নানা সমস্যা সৃষ্টি করেও স্বার্থান্বেষী চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারীরা যখন দেখল, তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করা যাচ্ছে না, তখনই চরম আঘাত হানার পথ বেছে নিয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল, তা নয়। পাকিস্তান আমলে ঊনসত্তরে আইয়ুব এবং ইয়াহিয়া তো একাত্তরে হত্যা করতে চেয়েছিল। উভয়ে কবর খুঁড়ে রেখেছিল। দুই সামরিক শাসকই রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারতে চেয়েছিল। বিচারের রায় আগেই নির্ধারণ করা ছিল। তথাপি তারা পারেনি। যেমন পারেনি বাঙালি মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে লড়াই করে। ১৫ আগস্ট পরিকল্পিত, নির্ধারিত এবং সুদূর প্রসারিত চিন্তার ফলে হত্যাকান্ডের আয়োজন মাত্র কয়েকজন উচ্চাকাংখী সেনা করেছে, তা নয়। এর সঙ্গে গভীর পরিকল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনি আরও অনেক চরিত্র জড়িত আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত এবং ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হয়নি। জাতিকে রাহুমুক্ত হতে হলে এর গুরুত্ব আবশ্যিক। বঙ্গবন্ধুর শেষের দিনগুলো পর্যালোচনা করলেও অনেক বিষয় সামনে চলে আসবে। একদিকে হত্যার আয়োজন হচ্ছে, ‘রেকি’ চলছে, আরেকদিকে পুরো বিষয়টা অন্ধকারাচ্ছন্ন এমনটাও বিশ্লেষণে আসে। যার যা দায়িত্ব ছিল, তারা তা পালন করেছে, এমনটা নয়। বরং অনেকেই এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিল এবং এই চক্রটি একাত্তর সাল হতেই সক্রিয়।
শেষের দিনগুলোতে খুনিদের সহযোগী, পরামর্শকরাও দেখা সাক্ষাৎ করেছিলেন, নাকি সবটাই দাপ্তরিক কাজ ছিল তা স্পষ্ট হয় পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জড়িত ছিল দেশি-বিদেশি অনেক কুশীলব। সে সব ক্রমশ প্রকাশ হচ্ছে এখনো।
১৯৭৫ সালের ১ আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দু-সপ্তাহের দিনগুলোতে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাটিয়েছিলেন খুবই ব্যস্ত সময়। সরকারি কর্মসূচির বাইরেও গঠিত নতুন দল বাকশালের পূর্ণাঙ্গ ‘সেটআপ’ তৈরিতেও ছিলেন ব্যস্ত। পাশাপাশি খুনিরাও ছিল অপতৎপরতায় শশব্যস্ত।
রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের ১৪ দিনের সরকারি কর্মসূচি পর্যালোচনা করলে বিস্ময় জাগে যে, শেষের সেই দিনগুলোতে প্রচ- ব্যস্ততার মাঝেও কেটেছে রাষ্ট্রনায়কের বিচিত্র মানুষের সংস্পর্শে। নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, এমন লোকজনও প্রতিষ্ঠান, সংস্থার প্রতিনিধিরাও শেষ দিনগুলোতে তাকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে, এমনটা নয়। নানামুখী চাপ যেন স্কন্ধজুড়ে তখন।
বিস্ময় বাড়ে যে, বঙ্গবন্ধুর এ সময়ের সাক্ষাৎপ্রার্থী, যারা নেতার সান্নিধ্য পেতে ভিড় করেছিলেন, তাদের অনেককেই দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর তার খুনি ও শত্রুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ ও হাতে হাত মেলাতে, দখলদার সরকারের মন্ত্রী হতে বা অন্যান্য পদে নিয়োগ পেতে। ছিল যারা দায়িত্বে, তারাও পাল্টেছিল ভোল। আরও বিস্ময় জাগায় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে যে সব দেশ বা রাষ্ট্রদূতরা নানাভাবে জড়িত তা ক্রমশ প্রকাশ হচ্ছে এই একুশ শতকে এসে। ফাঁস হচ্ছে ষড়যন্ত্রের নানাবিধ জাল। দেখা যায় শেষের দিনগুলোতে তাদের কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কথা বলেছেন। তারা রাষ্ট্রপতির মানসিক অবস্থা বুঝতে দেখা করেছিলেন সম্ভবত। অনুমান করা যায়, তাদের এই সাক্ষাৎ বঙ্গবন্ধুর ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারার’ মতোই ছিল হয়তো। রাষ্ট্রপতির দৈনন্দিন সরকারি কর্মসূচিতে নজর দিলে দেখা যায়, সাক্ষাৎপ্রার্থীরা সাক্ষাৎকালে বেশি সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, তা নয়। ১৫ হতে ২৫ মিনিট সময়কাল তারা অতিবাহিত করেন। এই সময় তাদের জন্য পূর্বাহ্ণে নির্ধারণ করা ছিল। স্বল্প সময়ে তারা কী হাসিল করেছেন, তা স্পষ্ট হয় তাদের পরবর্তী কার্যক্রমে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কর্মরত অনেকেই পরে খুনি ও ক্ষমতা দখলদারদের সঙ্গে হাত মেলায়। ১ আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের তারিখ ধরে এগোলে ভেসে আসে অনেক চেহারা। যাদের বিষয়ে উন্মোচিত হয় ১৫ আগস্টের পর।
কর্মসূচি ছিল ১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি থাকবেন। তার একদিন আগে ১৩ আগস্ট রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যিনি জিয়া, এরশাদ, খালেদার বিশ্বস্ত মন্ত্রী হয়েছিলেন পরে। ১৫ আগস্টের ১০ দিন আগে পাঁচ আগস্ট দেখা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজিন এ বোস্টার। সর্বশেষ সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন ১৪ আগস্ট মহিলা কোটায় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আজরা আলী। যিনি ১৫ আগস্ট মোশতাকের পার্শ্বচর হয়ে যান। মোশতাকের ডেমোক্র্যাটিক লীগেরও নেত্রী ছিলেন। এমনকি খুনিদের পক্ষে সাফাই গেয়ে অন্য সংসদ সদস্যদের মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন।
সর্বাধিক সাক্ষাৎ করেছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী। কখনো একা, কখনো তিন বাহিনীপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে। তিনিও মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন এবং মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১ আগস্ট ছিল শুক্রবার। দুপুর একটায় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ২৫ মিনিট কথাবার্তা বলেন। দুপুর দেড়টায় পার্বত্য নেতা মং প্রু সাইন মিনিট ত্রিশ কথা বলেন।
দুই আগস্ট শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ইয়াং ফপ দেখা করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কফিলউদ্দিন মাহমুদ, সন্ধ্যা ছয়টায় সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন চৌধুরী এবং সোয়া ছয়টায় সিলেটের এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপি সাক্ষাৎ করেন। মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেননি জনাব শহীদ।
তিন আগস্ট রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু অফিসে যাননি। তবে বাকশাল কার্যালয়ে গিয়েছেন।
চার আগস্ট ছিল সোমবার, সকাল ১০টায় দেখা করেন পাকিস্তান ফেরত মেজর মাজেদুল হক। পরে মেজর জেনারেল হন। ঢাকায় আসার আগের দিনও পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন বলে তথ্য প্রমাণ থাকার পরও স্ক্রিনিং কমিটি তাকে বাদ দেয়নি। তদবিরে সচল হয়ে সেনাবাহিনীর চাকরি ফিরে পান। পরে জেনারেল জিয়া ও খালেদার মন্ত্রীও হয়েছিলেন। খুনিদের প্রতি ছিলেন নমনীয়। এই দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মোয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী সাক্ষাৎ করেন। সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় কৃষক লীগ নেতা রহমত আলী এমপি সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যুগস্লোভাকিয়াতে পাঠিয়েছিলেন কৃষি সমবায়ের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য। ১৫ আগস্টের পর মোশতাকের ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ কর্মসূচির কর্ণধার ছিলেন। সারাদেশে কমিটি গঠনে বেশ তৎপর ছিলেন। মস্কোতে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামসুল হক সাক্ষাৎ করেন সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটে। ২৫ মিনিট স্থায়ী ছিল বৈঠক।
পাঁচ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজিন এ বোস্টার। তিনি জানতেন খুনিদের তৎপরতার কথা। তবে তিনি রাষ্ট্রপতিকে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করেনি। বরং ঘটনার অনুচক্র হিসেবে তার ভূমিকা পরে প্রকাশ হয়, এখনো হচ্ছে। হত্যাকা- সংঘটিত করার পকিল্পনা ও হত্যাকা-ের নেপথ্যে তার ভূমিকার কথা সর্বজনবিদিত। সাড়ে ১০টায় সাক্ষাৎ করেন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বিকাল পাঁচটা ৪৫ মিনিটে সিলেটের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী সাক্ষাৎ করেন। এই তিন সংসদ সদস্যের কেউই মোশতাককে সমর্থন করেননি। না করায় মানিক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। এদিন সন্ধ্যা ছয়টায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামসুর রহমান বিদায়ী সাক্ষাৎ করে গাইডলাইন নেন। ২০ আগস্ট তিনি মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান খান। ওনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক কলকাতা কাল হতে।
ছয় আগস্ট বুধবার দুপুর ১২টায় শ্রমমন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী এবং ১২টা ১০ মিনিটে তথ্য ও বেতারমন্ত্রী কোরবান আলী ও প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও সচিব মতিউল ইসলাম দেখা করেন।
সাত আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সুইজারল্যান্ডের নয়া রাষ্ট্রদূত পরিচয়পত্র পেশ করেন রাষ্ট্রপতির কাছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ডে রূপান্তর করার যে স্বপ্ন দেখেন তা ব্যক্ত করেন নয়া রাষ্ট্রদূতের কাছে। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী, সকাল ১১টায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী সাক্ষাৎ করেন। এরা দুজন মোশতাকের মন্ত্রী হন। ফরিদ গাজী ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় মোশতাকের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বেলা ১২টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বিদেশ সফরের প্রাক্কালে সাক্ষাৎ করেন। যা ছিল তাদের জীবনের শেষ সাক্ষাৎ। এই দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সমর সেন সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎকালে হাইকমিশনার সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে নানা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে। প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে তাদের কাছে তথ্য ছিল। এই সাক্ষাতের পর সমর সেন দিল্লি যান। ১৫ আগস্টের পর ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় কৃষক লীগ নেতা কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল আউয়াল এবং ছয়টা ১০ মিনিটে কাজী মোজাম্মেল হক এমপি সাক্ষাৎ করেন।
আট আগস্ট ছিল শুক্রবার। প্রথম ও দ্বিতীয় কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানদ্বয় একসঙ্গে সকাল ১০টায় দেখা করেন। সকাল সাড়ে দশটায় রেল প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আলতাফ হোসেন এবং সাড়ে ১১টায় পানি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোমিন উদ্দিন আহমদ সাক্ষাৎ করেন। এরা দুজন পরে মোশতাকের মন্ত্রী হন। সৈয়দ আলতাফ ছিলেন ন্যাপ (মুজাফফর) দলের প্রবীণ নেতা।
নয় আগস্ট শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি ডক্টর স্যাম স্ট্রিট সকাল ১০টায় সাক্ষাৎ করেন। আর সকাল ১১টায় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী ও সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সন্ধ্যা ছয়টায় বাকশালের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ও কার্যনির্বাহী কমিটির আরও কজন সদস্যসহ সাক্ষাৎ করেন। এটাই ছিল বাকশাল নেতাদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শেষ ভাষণ। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় অ্যাটর্নি জেনারেল দেখা করেন।
১০ আগস্ট রবিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। পাকিস্তান জামানা হতে এই ছুটি বহাল ছিল। এরশাদ যুগে রবিবার ছুটি বাতিল হয়। এদিন বঙ্গবন্ধু বাসভবনে ছিলেন।
১১ আগস্ট সোমবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শ্রমমন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। বাকশালের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী। একাত্তরে ছিলেন চিফ হুইপ। এই সাক্ষাতের ৪ দিন পর তিনি মোশতাকের মন্ত্রী হন। পরে জিয়াউর রহমানের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। আর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সাক্ষাৎ করেন কর্ম কমিশনের সদস্য আযহারুল ইসলাম।
১২ আগস্ট মঙ্গলবার, সকাল ১০টায় সাক্ষাৎ করেন অর্থমন্ত্রী ডক্টর আজিজুর রহমান মল্লিক, যিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক রহমানের সম্পর্কে আপন খালু এবং মোশতাকের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিন দিন পর ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেন, যখন বঙ্গবন্ধুর লাশ সিঁড়িতে। এই সাক্ষাৎ সম্পর্কে ড. মল্লিক মুখ খোলেননি। সন্ধ্যা ছয়টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সফররত কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক এ এফ হোসেন, যিনি ছিলেন একজন পাকিস্তানি।
১৩ আগস্ট ছিল বুধবার। সকাল ১১টায় যুক্তরাষ্ট্রে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আর সিদ্দিকী বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। তিনি পরে মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। দেশে ফেরার পরে ১৯৭৯ সালে মিজান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেখা করেন চাঁদপুরের এম এ রব এমপি।
১৪ আগস্টের তালিকায় দেখা যায় দিবসটি ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং হির বিশেষ দূত সাক্ষাৎ করেন। সকাল ১০টায় দেখা করেন নৌবাহিনীপ্রধান এম এইচ খান। যিনি পরদিন ১৫ আগস্ট সকালে বেতারে গিয়ে মোশতাকের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেন অন্য বাহিনীপ্রধানদের সঙ্গে। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি হত্যাকে সমর্থন করে বেতারে বক্তব্য রাখেন। এই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় খুনিদের অন্যতম সহযোগী ও হত্যার পরিকল্পনাবিশারদ তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর দেখা করেন। এর পর পরই আসেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী (পটিয়া, চট্টগ্রাম) ও বিমান বাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার দেখা করেন। তাদের এই সাক্ষাতের ১৮ ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু খুন হন। বিমানবাহিনী প্রধান ১৫ আগস্ট সকালে মোশতাকের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। পরে সামরিক জান্তাদেরও মন্ত্রী হন। আর তাহেরউদ্দিন ঠাকুর মোশতাকেরও মন্ত্রী হন। সকাল সাড়ে ১১টায় দেখা করেন জাতীয় লীগ সভাপতি আতাউর রহমান খানের দুই কন্যা। এদের জামাতারা এবং সহোদররা পরে বিএনপিতে যোগ দেয়। বিকাল পাঁচটা ৪৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বোস প্রফেসর ডক্টর আবদুল মতিন চৌধুরী দেখা করে পরদিন সমাবর্তন আয়োজন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। পঁচাত্তরের পরে তাকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয় মিথ্যা মামলায়। সন্ধ্যা ছয়টায় সাক্ষাৎ করেন শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও শিক্ষা সচিব। প্রফেসর মোজাফফর পরে জিয়ারও শিক্ষা উপদেষ্টা হয়েছিলেন। সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হুইপ আজরা আলী এবং শ্রীমতী সুপ্রভা মাঝি সাক্ষাৎ করেন। আজরা আলী খুনের সপক্ষে ভাষণ রাখা শুধু নয়, মোশতাকের ডেমোক্র্যাটিক লীগ নেত্রীও হয়েছিলেন। সুপ্রভা মাঝি সম্পর্কে পরে কিছু জানা যায়নি। অনুমান করা যায়, আজরা আলী যেদিন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে হয়তো এমন তথ্য নিয়েছেন, যা হত্যাকারীদের পরিকল্পনায় কাজে লেগেছে।
রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের এই সরকারি কর্মসূচির বাইরেও অনেক অনির্ধারিত কর্মসূচি থাকত। নির্ধারিত তালিকার বাইরেও অনেক সাক্ষাৎপ্রার্থী আসত। সাধারণত তিনি কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। বাসায়ও দর্শনার্থীর ভিড় থেকেই যেত এবং এটা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর হতেই।
১ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি সাক্ষাৎ করেছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী। যিনি মোশতাকের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ও দায়িত্ব পালন করেন। আর এই প্রতিমন্ত্রীর অধীনস্থ সমগ্র বাহিনীর বিপথগামী একাংশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। হত্যার ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হলে অনেক ঘটনা, ব্যক্তিবিশেষের ভূমিকা সবই প্রমাণ হতো। দেশ ও জাতির স্বার্থে হত্যা ষড়যন্ত্রের ইতিহাস প্রকাশ সংগত।
লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।
দখিনের সময় ডেস্ক:
লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল। গুলশানের...
দখিনের সময় ডেস্ক:
জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...
দখিনের সময় ডেস্ক:
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...
দখিনের সময় ডেস্ক:
আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...
দখিনের সময় ডেস্ক:
লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল। গুলশানের...
নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept”, you consent to the use of ALL the cookies.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.