Home চাকরির খবর ক্যাডারদের পদোন্নতির খবর নেই, নন-ক্যাডারদের নিয়ে তাড়াহুড়া

ক্যাডারদের পদোন্নতির খবর নেই, নন-ক্যাডারদের নিয়ে তাড়াহুড়া

দখিনের সময় ডেস্ক:

পদোন্নতির আশায় থাকা স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগকৃত ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তার পদোন্নতির খবর নেই। অথচ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, নন–ক্যাডার ও পিএসসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮৪ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে জ্যেষ্ঠতা প্রদানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আগামী বুধবার নন–ক্যাডারদের সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

সভার নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে বুধবার বিকেলে পদোন্নতিসংক্রান্ত সভায় ৮৪ জন সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সভাপতিত্ব করবেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী।

সভায় নন–ক্যাডারদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মো. মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। তবে সভায় কাগজপত্র ও আলোচনা করেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, সভায় যাঁদের পদোন্নতির প্রস্তাব আনা হবে, তাঁরা কেউ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো ছয় মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নেননি। কোনো বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশ নেননি। ক্যাডারে তাঁদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। তাঁরা সিনিয়র স্কেলের কোনো পরীক্ষায় অংশ নেননি। এ ছাড়া তাঁদের পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টির মামলা হাইকোর্ট বিভাগে চলমান।

আগামী বুধবার নন–ক্যাডারদের সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের বিশেষ সভার নোটিশ।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ২২ জুলাই এই নন–ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসংক্রান্ত একটি সভা হয়। সেখানে তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত হয়, নন–ক্যাডারদের পদোন্নতির সুযোগ নেই। সহকারী প্রকৌশলী পদে ৭ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুসরণ ছাড়া পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। পদোন্নতি দিতে হলে বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস করা, চাকরি স্থায়ী হওয়া, সিনিয়র স্কেলের পরীক্ষায় পাস করাসহ সব যোগ্যতা থাকতে হবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, অধিদপ্তরে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, পিএসসি এবং নন–ক্যাডার থেকে নিয়োগকৃত ৮৪ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে বিসিএসে (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) ক্যাডারভুক্ত করা হয়। এখানে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্তির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালার অপব্যাখ্যা করে রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ৮৪ জন কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এ ব্যাপারে সংক্ষুব্ধ ক্যাডার কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করলে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সব বিধিবিধান অনুসরণ ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের ৮৪ কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে। অথচ নিয়োগ বিধিমালা অধিকতর সংশোধনের প্রজ্ঞাপনের কোথাও ৮৪ কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে যোগদানের ব্যাপারে কিছু বলা নেই। এমনকি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক ভূতাপেক্ষ ক্যাডারভুক্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পদোন্নতির আশায় থাকা কর্মকর্তাদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো পূর্বানুমোদন ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে সরকারের বিপুল রাজস্ব অবৈধ বেতনের নামে লোপাটের চেষ্টা চলছে। এটি সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এমনকি এবার ক্যাডারভুক্তির ক্ষেত্রে তাঁদের প্রধান প্রকৌশলীসহ অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রজ্ঞাপিত ৮৪ কর্মকর্তার মধ্যে জুনিয়র হয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, নিয়োগ বিধিমালা না করেই আগে ২০১৯ সালে ৯৫ জনকে ক্যাডারভুক্ত করার একটি প্রজ্ঞাপন করা হয়, যা মন্ত্রণালয় আবার বাতিল করতে বাধ্য হয়। মন্ত্রণালয় বারবার একই ঘটনা ঘটাচ্ছে। সেই প্রজ্ঞাপনে সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের কথা উল্লেখ করা হলেও কর্ম কমিশন সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের সুপারিশসংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

ক্যাডার কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি মামলা করা হয় এবং বর্তমানে এ মামলা চলমান। মহামান্য আদালত এই ৮৪ জনের ক্যাডারভুক্ত আদেশের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন। উচ্চ আদালতের এই রুল নিষ্পত্তি না করেই সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ক্যাডারভুক্ত প্রায় চার মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারের ক্যাডার সার্ভিসে পদোন্নতির বিধিমালা লঙ্ঘন করে ৮৪ জনকে পদোন্নতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ কারণে সরাসরি ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

আগামী বুধবার নন–ক্যাডারদের সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের বিশেষ সভার নোটিশ। ছবি: সংগৃহীত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

আধাঘণ্টায় ৫০ হাজার ইলেকট্রিক গাড়ির অর্ডার পেল শাওমি

দখিনের সময় ডেস্ক: নিজেদের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) বাজারে এনেছে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় এই গাড়ি উন্মোচন করা হয়। আর...

‘স্পেস স্যুট’ ছাড়া মহাকাশে কতক্ষণ বাঁচবেন নভোচারীরা?

দখিনের সময় ডেস্ক: ভীষণ কঠিন একটি কাজ মহাকাশ ভ্রমণ। যখনই একজন মহাকাশচারী যাত্রা শুরু করেন, তার আগে তাকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়। পৃথিবীর বাইরের এমন...

মোবাইল ফোন চার্জের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

দখিনের সময় ডেস্ক: মোবাইল ফোনের ব্যাটারিতে হঠাৎ বিস্ফোরণ বা আগুন ধরার কারণে প্রায়ই প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। মোবাইল চার্জে থাকাকালীন এ ধরনের ঘটনা...

গরমে পুদিনা ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা

দখিনের সময় ডেস্ক: গরমে সবার প্রাণই হাঁসফাঁস। কী করলে একটু স্বস্তি পাওয়া যাবে সেই প্রচেষ্টাই সবার। এমন গরমে শরীর ও মন ঠান্ডা রাখে এমন খাবারই...

Recent Comments