Home শিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিনে এই খাবার খায় ছাত্র-ছাত্রীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিনে এই খাবার খায় ছাত্র-ছাত্রীরা

দখিনের সময় ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়। প্রচার করা হয় অনেক গৌরবগাথা। কিন্তু তেমন আলোচনা হয় না, দেশের সেরা শিক্ষাপিঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে। আর হল ক্যান্টিনে ছাত্র-ছাত্রীদের খাবারের মান প্রসঙ্গটি কখনোই আলোচনায় আসে না। কিন্তু অনেকেই জানানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনে পরিবেশন করা হয় খুবই নিম্নমানের খাবার।

নিম্নমানের চাল, নিম্নমানের মাছ-মাংস-সবজি পরিবেশন করা হয় হল ক্যান্টিনে। অনেকেই বলেন, চালের মান রিলিফের চালের চেয়েও খারাপ। সিজন শেষে যে সবজির দাম সর্বনিম্ন হয় সেই সবজি আসে হল ক্যান্টিনে। মাছ-মাংস আসে খুবই নিম্ন মানের। এবং খুবই ছোট করে কাটা হয়। আর পরিবেশিত ডাল এতটাই পাতলা হয় যে, তাকে কখনো মনে হয় খাবারের পর হাতধোয়া পানির মতো। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই খাবার খাওয়ার সক্ষমতা নেই অনেক শিক্ষার্থীর। এই সক্ষমতা আরো হ্রাস পেয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধকলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। পড়ছেন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে। আগে সাড়ে তিন হাজার টাকায় টেনেটুনে মাস চালাতেন তিনি। এখন অন্তত দেড় হাজার টাকা বেশি লাগছে তার। কিন্তু চাইলেই তো টাকা জোগার করা যায় না! ফলে তিনি সকালের নাশতা খাওয়া বাদ দিয়েছেন। বিকেল বা সন্ধ্যায়ও কিছু খান না। কেবল দুপুর আর রাতে হলের ক্যান্টিনে ভাত খান। সেখানেও মিতব্যয়ী হতে হয়েছে তাকে। বেশিরভাগ সময় কেবল সবজি দিয়েই দুপুরের খাবার সারেন তিনি।  একরকম বাদ দিয়েছেন মাছ-মাংস খাওয়া।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতে। যার ফলে শুধু জাহিদ নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন সংকটে পড়েছেন।

মুরগির মাংস যেখানে ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যেত, সেখানে এখন তা ৫০ টাকা করা হয়েছে। ৩০-৩৫ টাকার মাছের পিস এখন নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। গরুর মাংস ৪৫-৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। ডিম-ভাত পাওয়া যেত ২৫-৩০ টাকায় এখন সেটি ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া অনেক খাবারেই তুলনামূলক দাম বেশি রাখতে দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়া এবং ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ হলে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। যেখানে বাড়েনি, সেখানে অন্য উপায় অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন, মাছ ও মাংসের আকার ছোট হয়ে গেছে। কমে গেছে সবজি-ভর্তার পরিমাণ।

কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বরেন, ‘এক মাসের খরচ চালাতে আগের চেয়ে ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বেশি লাগছে। টিউশনির টাকা কিন্তু বাড়েনি। মাস শেষে দেখা যায় ‘শ্রীলঙ্কা’ হয়ে বসে আছি! কী করব, বাধ্য হয়ে খাওয়া-দাওয়া সীমিত করতে হচ্ছে!’

ক্যান্টিনের চেয়ে কিছুটা ভালো মানের খাবারের আশায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ও হলের খাবারের দোকানগুলোতে খান। সেখানেও খাবারের দাম বেড়েছে আগের তুলনায়। দোকান ভেদে মুরগির মাংস ৬০-৬৫ টাকা, খিচুড়ি ৬০-৭০ টাকা, পোলাও ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ৫০-৬০ টাকার মধ্যে এসব খাবার পাওয়া যেত। এছাড়া দোকানগুলোতে কলা-রুটি থেকে শুরু করে সব ধরনের নাশতা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাস্তবতা মানছেন শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কিছুটা ভর্তুকি দেওয়া হয় আর কর্তৃপক্ষ যদি ক্যান্টিনগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেন তাহলে কম খরচের মধ্যেই মোটামুটি একটা মানের খাবার খেতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার বলেন, প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা কেবল ‘ফাও’ খেয়ে যান রাজনৈতিক পরিচয়ধারী শিক্ষার্থীরা। তাদের কিছু বলতেও পারি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে এমনিতেই চলতে পারছি না, সেখানে যদি ফাও খায়, আমাদের লাভ কীভাবে হবে? আমি যদি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাই তাহলে কালই আমাকে এখান থেকে বের করে দেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments