Home অন্যান্য অপরাধ ও দূর্নীতি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করলো দোকান কর্মচারী, টিসি দিলো স্কুল!

ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করলো দোকান কর্মচারী, টিসি দিলো স্কুল!

দখিনের সময় ডেস্ক:

বরিশাল নগরীতে চুরির অপবাদে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে মাতৃছায়া নামে দোকানের কয়েক কর্মচারী। এমনকি তারা এ ঘটনার একটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে কোতয়ালী থানা কোন মামলা নেয়নি।

পুলিশ অভিযুক্তদের ধরে নিয়ে গেলেও ‘সমঝোতার’ নামে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে দোকান কর্মচারীদের অপকর্মের ভিডিও দেখে ওই ছাত্রীকে স্কুল থেকে টিসি দিয়েছেন বরিশাল নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া জেসমিন।

মাতৃছায়া দোকান

ছাত্রীর বক্তব্য:

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ওই ছাত্রী বলে, শনিবার (০৬ আগস্ট) আমি একটি দোকান থেকে কিছু প্রসাধনী কিনে ফলপট্টি উলফৎ প্লাজার মাতৃছায়া নামের দোকানে গিয়ে আমার ব্যাগ থেকে আগের কেনা প্রাসাধনী দেখিয়ে আরও কিছু প্রসাধনী দিতে বলি। মাতৃছায়া দোকান থেকে কয়েকটি পণ্য ক্রয়ের পর আমি বিক্রেতাকে দাম পরিশোধ করি। সে টাকা নিয়েও আমাকে পণ্যগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। আমি নিতে চাইলে তিনি পণ্যগুলো টেনে ধরেন এবং আমার হাত ধরে টেনে গায়ে হাত দেন। তখন আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। তারপর ওই দোকানের বিক্রেতা উত্তেজিত হয়ে আমার ব্যাগ টেনে ধরে তার মধ্যে রাখা আগের দোকান থেকে কেনা পন্য বের করে সবাইকে ডেকে বলেন, আমি তার দোকান থেকে চুরি করেছি। আমি প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়।

মাতৃছায়া দোকানের মালিক মাসুদ করিম

ওই ছাত্রী বলে, আমাকে সে (আউয়াল) দোতলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেছিলেন ‘আমার সঙ্গে আসো। আমি যা বলব তাই শুনবা। নয়তো তোমাকে পুলিশে দেব।’ আমি তার সঙ্গে দোতলায় যেতে গিয়ে দেখি, সেখানে একটি কক্ষ বন্ধ। তখন আমি ওপরে উঠিনি। আবার নিচে নেমে আসি। তখন তাদের দোকানের আরেক ছেলে বাপ্পা এসে মোবাইলে ভিডিও করছিল। বারবার সে আমার স্কুলের মনোগ্রাম দেখাচ্ছিল। সে বলছিল, আমি চুরি করেছি। বলছিল, নতুন নতুন চোর আসছে। চোর বুঝতে পারেনি কীভাবে চুরি করতে হয়?

বাপ্পা আমার ভিডিও করতে করতে বলেছিল, চোর অনেক সুন্দর। আমি (বাপ্পা) ক্রাশ খেয়েছি চোরের ওপর। চোরের চুল সুন্দর। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বর্ণনা দিয়ে যৌন হয়রানি করছিল। শেষে তারা আমার বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে আমাকে ছেড়ে দেন। এই ঘটনার ভিডিও আউয়াল এবং বাপ্পা ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।

ছাত্রী হেনস্থার সময় এই সেলসম্যান ছিলেন প্রধান কুশিলব। ২৫ আগস্ট দখিনের সময় প্রতিদেককে তিনি দম্ভের সঙ্গে বলেন, ‘ঘটনার মিটমাট হয়েগেছে।’

হয়রানির শিকার ছাত্রী জানায়, সেই ভিডিও বরিশালে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি আমার কয়েকজন বান্ধবী স্কুলে দেখালে, প্রধান শিক্ষক আমার মাকে ডেকে সোমবার টিসি দিয়ে দেন। ওই দিন আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে, ওসি আজিমুল করিম আমাদের বলেন, মামলা করে কোনো লাভ হবে না। এই ঘটনায় আমরা ভালো কোনো বিচার পাব না। তবে যারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে ভাইরাল করেছে, তাদের ধরে এনে কারাগারে আটক করেছিলেন। কিন্তু শেষে ছেড়ে দিয়েছেন। আমি পণ্য কিনতে গিয়ে, আমার স্কুলে এবং থানায় কোথাও সুবিচার পাইনি। সবাই আমাকে ঠকিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

স্কুলছাত্রীর মায়ের বক্তব্য:

স্কুলছাত্রীর মা বলেন, কসমেটিকসের ওই দোকানের ৬-৭ জন বয়স্ক লোক আমার নাবালিকা মেয়েকে জোরজবরদস্তি করে চোর সাব্যস্ত করে ভিডিও করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল করে দিয়েছে। আমার মেয়েকে হয়রানির ঘটনায় থানায় গিয়েছিলাম লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা ভিডিও দেখে অভিযুক্ত দুই ছেলেকে ধরে এনে থানায় আমাদের বসিয়ে মৌখিকভাবে সালিস করেছে। আমি মনে করি, এতে আমরা সুবিচার পাইনি। আমার মেয়েকে যে হয়রানি-নির্যাতন করা হয়েছে তার বিচার চাই।

স্কুলছাত্রীর বাবার বক্তব্য:

স্কুলছাত্রীর ব্যবসায়ী বাবা বলেন, আমাদের ডেকে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে বলেন, যেন ‘পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে মেয়ের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করি। আমরা তাকে অনুরোধ করেছিলাম আসল সত্যিটা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি মেয়েকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

প্রধান শিক্ষক হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি তার কথামতো আবেদন না করি, তাহলে এমন কিছু করে দেবে জীবনে আর কোনো স্কুলে ভর্তি করাতে পারব না। আমি বিচার চাইতে থানায় গিয়েছিলাম। থানা থেকে বলেছে, মেয়ে তো মামলা করে তেমন সুফল হবে না। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করায় ভালো। শেষে আমাদের দুই পক্ষকে বসিয়ে মিলমিশ করিয়ে দেন ওসি।

দোকানের মালিক মাসুদের দোষ স্বীকার:

মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্কুলছাত্রীকে আটকে হয়রানির কথা স্বীকার করেছেন মাতৃছায়া নামক সেই দোকানের মালিক মাসুদ করিম। তিনি বলেন, আমার দোকানের দুই কর্মচারী ভুল করেছে। একটি ঘটনা ঘটিয়ে সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছে। এই কাজটি তারা অন্যায় করেছে। এজন্য তারা থানায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে এসেছেন।

দোকানের মালিক মাসুদ করিম বলেন, মেয়ের পরিবার থানায় গেলে থানা থেকে পুলিশ এসে আমার দুই কর্মচারীকে আটক করে নিয়ে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে বসিয়ে ওসি সমঝোতা করিয়ে দেন। ওসি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনেকবার অনুরোধ করেছেন যেন ছাড়পত্র না দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো কথা শোনেননি। আমিও মনে করি, ওই মেয়েকে ছাড়পত্র দিয়ে সুবিচার করেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মেয়েটি আসলে দায়ী কি না তা বিবেচনা না করে একটি ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।

শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন

প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য:

পুরো ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিনের কাছে। তিনি জানান, ওই ছাত্রীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ছাড়পত্র দেয়নি। শিক্ষার্থীর মায়ের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীর যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা আমিও দেখেছি। তবে এটা অনেক আগের ঘটনা। আর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ২২ আগস্ট। তিনি দাবি করেন, ওই ছাত্রী ক্লাসে অনিয়মিত। সে নিয়মিত স্কুলে আসে না। আবার আসলেও দেরি করে আসে। ওই ছাত্রীর নামে আগে থেকেই টুকিটাকি অভিযোগ এবং দোষ আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments