Home বরিশাল বরিশালে মেয়র সাদিক-আফজালুল বিতণ্ডা, নেপথ্যে খেলছে পচাত্তরের থিংকট্যাংক

বরিশালে মেয়র সাদিক-আফজালুল বিতণ্ডা, নেপথ্যে খেলছে পচাত্তরের থিংকট্যাংক

দখিনের সময় রিপোর্ট:

আওয়ামী লীগের সভায় আফজালুল করিমের রহস্যজনক বক্তব্যে বিরক্ত হয়ে মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনি কেন এক পক্ষে বলতেছেন? আপনি তাইলে ডিসি-ইউএনওর সঙ্গে যাইয়া পার্টি করেন, আমাদের সঙ্গে সংগঠন করার দরকার নাই আপনার।’ এই বিতণ্ডা চলাকালে তালুকদার মো. ইউনুস টেলিফোনে ব্যস্ত থাকার ‘চেষ্টা ’করেছেন। এ কে এম জাহাঙ্গীর কিংকর্তব্য বিমুর হয়ে মাথা চুলকিয়েছেন।

আফজালুল করিমের বক্তব্যের মাঝেই তার সঙ্গে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ একাধিকবার বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে দেন মেয়র সাদিক। সভায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, ৭৫-এর থিংকট্যাংক নতুন করে খেলায় সক্রিয় হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিমের বাকবিতণ্ডা হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায় বাকবিতণ্ডা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। এ বিতণ্ডার মূলে রয়েছে গত বছরের ১৮ আগস্ট ইউএনওর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

আজ শনিবার(২৭ আগস্ট) দুপুরে নগরীর কালীবাড়ি রোডে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায় এক বছর আগের ওই ঘটনা নিয়েই বিতণ্ডায় জড়ান দুই নেতা। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ফেসবুক পেজ থেকে করা লাইভে বাগবিতণ্ডার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে। একপর্যায়ে লাইভটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, রাজনীতিতে অনেক দূর যেতে হবে, তাই কাউকে হৃদয়ে আঘাত দিয়ে কথা না বলাই ভালো। কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি না থাকাই ভালো, আমিও পরিষ্কার করি। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে। এখন যদি আপনারা মনে করেন আমার পেছনে শওকত হোসেন হিরনের একটা তকমা আছে, এইটা আপনারা ভুইলা যান। আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে। আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের শিষ্য ছিলেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর লগে রাজনীতি করেছেন। আমি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে রাজনীতি কইরা এখন মেয়রের সঙ্গে রাজনীতি করি।

আফজালুল করিমের বক্তব্যের মাঝে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি স্যরি, আপনি মুরব্বি। শওকত হোসেন হিরনের তকমা না, শওকত হোসেন হিরন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিল, আপনি (আফজালুল) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাংগঠনিকভাবে তকমার কোনো বিষয় নাই এখানে।

আফজালুল করিম এরপর বলেন, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। অনেক চড়াই-উতরাই গেছে, কিন্তু আমাকে টলাইতে পারে নাই। আওয়ামী লীগ পরিবারের বাইরে কোনো চিন্তা নাই। মান্না একটা কথা বলছে, একজনের সঙ্গে আমি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী যে প্রোগ্রাম করছি, সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে যেমন প্রশংসিত, মাঠ পর্যায়েও প্রশংসিত। আমি একজনকে একটা কথা বলছিলাম, নামটা প্রকাশ করব না– সেটা হলো, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে প্রোগ্রামগুলোতে ১৮ আগস্টের ঘটনার বক্তব্য থাকবে। আমাদের নেতার গায়ে গুলি করা হইছে, ৪০ জন আহত হইছে, দুইজনের চোখ উৎপাটন করা হইছে। এই ঘটনা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। আমাদের মেয়র মহোদয়ের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা করা হয়। পরের দিন সকাল ১০টায় ২০০-৩০০ পুলিশ যখন মেয়র মহোদয়কে গ্রেপ্তার করে রাখে, তখন সেখানে সর্বপ্রথম আসা ব্যক্তিটি আমি। বক্তব্য দিয়ে জাতির সামনে এই ঘটনা তুলে ধরা ব্যক্তিটি আমি।

একদিন একজনকে বলছি ‘ডিসি ও টিএনও’ এই শব্দ দুইটি ব্যবহার করে বক্তব্য না দেওয়া ভালো, ১৮ তারিখের ঘটনা বলা ভালো। মেয়র মহোদয় কর্মীবান্ধব নেতা। তবে ওই দুইটি ওয়ার্ড আমাদের ইউজ না করাই ভালো। দলেও আমরা আছি, প্রশাসনেও আমরা। দল হিসেবে প্রশাসনকে তো আমাদেরই সুরক্ষা দিতে হবে। আগামীতে নির্বাচন আছে। একজন ডিসিকে যদি গালাগাল করা হয় বা কটাক্ষ করা হয়, তাহলে ৬৪ জন ডিসি হার্ট হয়ে যায়, আবার একজন টিএনও বা ওসিকে নিয়ে কটাক্ষ করলে সব টিএনও ও ওসি হার্ট হয়ে যায়। আমি বলছি, ওই দুইটা ওয়ার্ড না বলাই ভালো।

এ সময় মেয়র সাদিক বলেন, এখন যারা মাইর খাইছে, গুলি খাইছে, আমরা কি প্রতিবাদ করছি কখনও? যারা মাইর খাইছে, তারা বলতে পারবে না? আপনারা তো জিজ্ঞাস করলেন একজন মেয়রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে না জিজ্ঞাসা করে কীভাবে মামলা দেয়? আপনে এখন ডিসি-টিএনওর কথা বলতেছেন। এইটা তো কোনো কথা না।

আফজালুল করিম তখন বলেন, আমি তো জাতির স্বার্থে বলেছি এগুলো।

মেয়র সাদিক বলেন, আপনি তো একতরফা এই কথাগুলো বললে হবে না। আপনি সহসভাপতি, আপনাকে সব জায়গায় সম্মান দেব, সব ঠিক আছে। আপনি তো বলতে পারেন না নেতাকর্মীরা ১৮ আগস্টের কথা বলতে পারবে না। আপনি সাফাই দিলে আমিও তো সাফাই দিতে পারি অনেক। আপনি ১ নম্বর সহ-সভাপতি হিসেবে আপনার আরও অনেক কিছু বলার ছিল। এখানে প্রশাসনের লোক আছে, বাইরের লোকও আছে। আপনি কেন একপক্ষে বলতেছেন? আপনি তাইলে ডিসি-ইউএনওর সঙ্গে যাইয়া পার্টি করেন, আমাদের সঙ্গে সংগঠন করার দরকার নেই আপনার।

আফজালুল করিম বলেন, আমার বিবেকে অপরাধী মনে হয়েছে, তাই বলেছি। হতে পারে আমার ভুল, তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি।

তখন মেয়র সাদিক দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন, অনেক কথা তো আমারও বলার আছে। আপনি যে পাল্টা কাউন্টার দিলেন, তাতে তো আওয়ামী লীগের এই ফোরামে আসার আপনার দরকার নাই। আপনি ডিসি-এসপিদের অফিসে যান। আপনাদের এসব কথার কারণে তারা আমাদের দিকে আঙুল তোলার সাহস পায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments