আলম রায়হান:
বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি বেশ স্পষ্ট। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ক্রমবর্ধমান দামের কারণে দরিদ্র দেশগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে। ১৮ মে নিউ ইয়র্কে গুতেরেস একথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
বাংলাদেশেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিডের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়াকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের কারণে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। এমন বাস্তবতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাশ্রয়ী হওয়া, মিতব্যয়িতা ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি যা হয়েছে তা বিশ্বের সাধারণ মানুষের। উন্নত দেশগুলো সাশ্রয়ের পথে হাটছে। আমাদেরকেও সাশ্রয়ী হতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও চাষাবাদের বাইরে না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বে নিকট অতীতে উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সাউথ সুদান ইত্যাদি জায়গায় দুর্ভিক্ষ দেখা গেছে। ৭৪ সালের পর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি। তাই বলে উদাস থাকার কোন সুযো নেই। কারণ আমাদের এই ভুখন্ডে বিগত কয়েকশ বছরের মাঝে একাধিকবার দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মহাস্থানগড়ের শিলালিপিতে এই অঞ্চলে প্রথম দুর্ভিক্ষের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে কয়েক শতাব্দিতে আর কখনও দুর্ভিক্ষের তথ্য পাওয়া যায় নি। কিন্তু ধরে নেয়া হয় প্রায়শই এই অঞ্চলের মানুষ দুর্ভিক্ষতুল্য দারিদ্রের মাঝেই বাস করত। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ উঠে এসছে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে আমাদেরকে সর্তক হতেই হবে।
আমাদের হাতে যেহেতু এখনও সময় আছে আমরা এখন থেকেই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য তৈরি হতে পারি। দুর্ভিক্ষের মূল সংকট যেহেতু খাদ্য, আমরা চাইলেই আমাদের চারপাশের প্রতি ইঞ্চি জমির সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্যাভাব পূরণ করতে পারি। সরকারীভাবে অনাবাদি সকল জমি আবাদের আওতায় আনতে তো হবেই ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি খরচ কমাতে হবে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় ‘ফুটানি’ বন্ধ করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, বিপদ দুয়াড়ে! যেহেতু সারা পৃথিবীতেই একই সময়ে সংকট শুরু হবে, সেহেতু বিদেশী সাহায্য কিন্তু পাওয়া যাবে না।