Home লাইফস্টাইল কী করে বুঝবেন আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য খারাপ

কী করে বুঝবেন আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য খারাপ

দখিনের সময় ডেস্ক:

অনেকেই বলেন, ‘আমার ছেলেটা না একদম হালকা–পাতলা, ওর স্বাস্থ্য কি আর ভালো হবে না?’ উল্টো অভিজ্ঞতাও আছে, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে ক্লাসে সবাই হাসাহাসি করে, দিন দিন ও মোটা হচ্ছে, কী করব?’

সন্তানের স্বাস্থ্য, ওজন বাড়া-কমা নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। গড়পড়তা বাঙালি মা-বাবা অনেক সময় স্বাভাবিক সুস্থ শিশুকেও ‘শুকনা’, ‘হ্যাংলা’, ‘স্বাস্থ্য খারাপ’ ভেবে থাকেন। আমাদের সংস্কৃতিতে ‘স্বাস্থ্য ভালো’ কথাটির অর্থ মোটাতাজা, গোলগাল শিশু!

শিশুর স্বাভাবিক ওজন সম্পর্কে ধারণা থাকলে এসব দুশ্চিন্তার অনেকটাই অবসান হতে পারে। জন্মের সময় নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন ২ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম। প্রথম তিন থেকে চার মাসে যা দ্বিগুণ হয়, এক বছরে তিন গুণ এবং দুই বছর বয়সে হয় চার গুণ। একইভাবে নবজাতকের জন্মের সময় দৈর্ঘ্য থাকে সাধারণত ৫০ সেন্টিমিটার। প্রথম বছরে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার বাড়ে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে আসে। চতুর্থ বছরে বয়সের দ্বিগুণ হয়।

শিশুরোগবিশেষজ্ঞরা শিশুর সঠিক বৃদ্ধি, বয়স অনুযায়ী সঠিক ওজন বা উচ্চতার মাত্রা নির্ধারণ করতে গ্রোথ চার্ট ব্যবহার করেন। মেয়ে ও ছেলেশিশুভেদে এই বৃদ্ধি ভিন্ন হয়। আবার শিশুদের ওজন–উচ্চতা তাদের মা-বাবার ওজন ও শারীরিক কাঠামোর ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনার শিশু যদি এই গ্রোথ চার্ট অনুযায়ী সঠিক মাত্রার মধ্যে পড়ে, তবে অকারণ দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন
যদি শিশুর ওজন অস্বাভাবিক কম মনে হয়। এর সঙ্গে ত্বক ঢিলে হয়ে আসা, খিটখিটে মেজাজ, পায়ের পাতায় পানি জমা, খাওয়া ও খেলায় উৎসাহ একেবারে কম, ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ, পেট ফোলা প্রভৃতি উপসর্গ গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ। শিশুর অপুষ্টি কেবল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমস্যা নয়, অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে যেকোনো পরিবারের শিশুই অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।

কম ওজনের সঙ্গে ঘন ঘন ঠান্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট হলে হতে পারে তা জন্মগত হৃদ্‌রোগের লক্ষণ। যদি অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে কম উচ্চতা, বিকাশজনিত সমস্যা, যেমন দাঁড়ানো, হাঁটা, কথা বলায় ধীরগতি থাকে, তাহলে থাইরয়েডের সমস্যা বা কোনো বংশগত রোগ হতে পারে। যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ওজন বাড়ে না বা কমতে থাকে। যেমন শিশুদের কিডনিজনিত রোগ, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি।

অভিভাবকের করণীয়
১. জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে সঠিক নিয়মে শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে।

২. ছয় মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ঘরে তৈরি সুষম খাবার দিতে হবে।

৩. খাবার তৈরির সময় পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি হলে ঘন ঘন পেটের পীড়া বা সংক্রমণ হতে পারে, যা থেকে আবার ওজন কমবে।

৪. ঘরের বাইরে ছোটাছুটি ও খেলাধুলায় শিশুকে উৎসাহ দিন। এতে শিশুর খিদে লাগবে, আবার বাড়তি মেদও জমতে দেবে না।

৫. শিশুদের সময়মতো খাওয়া ও খেলার একটি রুটিন তৈরি করুন।

৬. শিশুর সঙ্গে সময় কাটান, তাদের ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে মানসিক বিকাশে সাহায্য করুন, যা শারীরিক বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

যা করবেন না
শিশুকে জোর করে ও ভয় দেখিয়ে খাওয়াবেন না। টিভি, মুঠোফোনে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস পরিহার করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘন ঘন এবং দীর্ঘদিন ভিটামিন খাওয়াবেন না।

লেখা:ডা. লাজিনা শারমিন, শিশুরোগবিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা শিগগিরই: শিবির সভাপতি

দখিনের সময় ডেস্ক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে...

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

দখিনের সময় ডেস্ক সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরীকে রাজধানীর আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার রাজধানীর...

শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

দখিনের সময় ডেস্ক: কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বাড়ির সামনে থেকে তাহমিনা আক্তারের (৭) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত...

স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, থানায় এসে স্বামীর আত্মসমর্পণ

দখিনের সময় ডেস্ক: রাজধানীর পল্লবীতে শামসুন্নাহার (৫২) নামের এক নারীকে নিজ হাতে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ঘাতক স্বামীর নাম মোখলেছুর রহমান (৫২)।...

Recent Comments