Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর অসহায় বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব, বিস্তারিত জানিয়ে কেন্দ্রে পত্র

অসহায় বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব, বিস্তারিত জানিয়ে কেন্দ্রে পত্র

কাজী হাফিজ:

বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ জলিল। দীর্ঘ পথচলায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় লাভ করেছেন বরিশাল জাতীয় পার্টির সদস্য সচিবের পদ। তাঁকে এই পদে ‘নিয়োগ প্রদান’ করা হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি।

কেন্দ্রের দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত নিয়োগ পত্রে বলা হয়, ‘উল্লেখ থাকে যে, পত্র ইস্যু হওয়ার তারিখ হইতে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যে কাজ ৭ কর্ম দিবসে করতে বলা হয়েছে তা ৭ মাসেও হয়নি। হবার কোন লক্ষণও নেই। বরং বরিশাল জাতীয় পার্টির ‘উলঙ্গ বিরোধ’ নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর। এ ঘটনায় নিজের ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব জানিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে পত্র দিয়েছেন বরিশাল জেলার সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ জলিল। উল্লেখ্য, তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির ধারায় সম্পৃক্ত হয়েছে ১৯৯১ সালে; যখন দলটির দুর্দিন ছিলো।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বরাবরে প্রেরিত পত্রে এ্যাড. এম এ জলিল উল্লেখ করেছেন, ‘গত ইং ২৩/০৯/২০২২ তারিখ সন্ধ্যায় বরিশাল কীর্তনখোলা মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির ব্যানারে ডাকা মিটিংয়ে জাতীয় পার্টি বরিশাল জেলার সদস্য সচিব হিসেবে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এবং মিটিং সম্পর্কে আমাকে কিছুই না জানানো হয়নি। ব্যানারে বরিশাল জেলার আহ্বায়কের নামসহ বিশাল ছবি দেওয়া হয়। কিন্তু উক্ত ব্যানারে কোথাও আমার নাম না লেখাসহ সদস্য সচিব হিসেবে আমাকে অবজ্ঞা করার কারন তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্টু বিচারের প্রার্থনা করি।’

এ্যাড. এম এ জলিল তার পত্রে জানান, ‘আমি ১৯৯১ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজ বরিশাল জেলা শাখায় যোগদান করি এবং ১৯৯৬ সালে বরিশাল ল’কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। অতঃপর ১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টি, বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক পদে এবং ২০০৫ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হই এবং ২০১৯ সালে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। গত ইং ২৭/০২/২০২২ তারিখ একটি পত্রে আমাকে বরিশাল জেলার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এবং ঐ একই তারিখের একই বার্তার মাধ্যমে জনাব এ্যাড. একে এম মুরতজা আবেদিনকে বরিশাল জেলার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।’

এ্যাড. এম এ জলিল তাঁর পত্রে বলেন, ‘আমি এই মর্মে অভিযোগ করিতেছি যে, পরবর্তীতে আমি ইং ০১/০৩/২০২২ তারিখ উক্ত চিঠি হাতে পাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ইং ০২/০৩/২০২২ তারিখ সকাল ৮ ঘটিকায় বরিশাল জেলার আহ্বায়ক জনাব এ্যাড. একে এম মুরতজা আবেদিনের সঙ্গে সদস্য সচিব হিসেবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তাহার বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিয়ে দরজা খুলতে বলি। এবং তাহার সঙ্গে একত্রে চা খাইতে চাই। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করিবেন না, এমনকি আমার সাথে একত্রে চাও খাবেন না বলিয়া জানান। আমি জেলার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব বিষয়টি জানাইলে তিনি আমার সঙ্গে কোন রাজনীতি করিবেন না বলিয়া জানান। আমি মোবাইলে তাহার সঙ্গে একত্রে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করিলে তিনি বিরক্ত হইয়া যান এবং বাজে ধরনের মন্তব্য করিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রকাশ করেন যে, তিনি আর রাজনীতিই করিবেন না।’

এম এ জলিল পত্রে উল্লেখ্য করেন, ‘এরপর ইং ০৪/০৩/২০২২ তারিখ সকাল বেলা পুনরায় তাহার বাসার সামনে গিয়া ফোন দিলে তিনি বাসায় নাই বলিয়া আমাকে জানান। মোবাইল ফোনে কথা বলিতে চাহিলে তিনি বিরক্তি সুরে আমাকে বলেন যে, তিনিতো আগেই আমাকে বলে দিয়েছেন আমার সঙ্গে রাজনীতি করিবেন না। আমি বললাম ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন সেটা আমাকে না বলিয়া চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বলেন। ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলিয়া আমাকে পুণরায় এ ব্যাপারে ফোন না করার জন্য বলেন। পরবর্তীতে ইং ০৭/০৩/২০২২ তারিখ সকাল ৮:৩০/৯ টার সময় ফোন দিলে তিনি আমার উপর মোবাইল ফোনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন এবং বিরক্তি সহকারে বলেন যে, আবার ফোন করেছেন কেন?  আমি না আপনাকে ফোন দিতে নিষেধ করেছি এবং তিনি বিরক্তি ও রাগের সুরে বলেন, আমাকে আর কোন দিন ফোন দিবেন না।’

এম এ জলিল পত্রে উল্লেখ্য করেন, ‘অতঃপর বিষয়টি আমি মেজর( অবঃ ) রানা মোহাম্মদ সোহেল সাহেবকে জানাই, তিনি আমার সবকিছু শুনে আমাকে ধৈর্য্য ধরার জন্য বলেন। অতঃপর আমি কোন উপায় না পাইয়া বরিশালের ১০ টি উপজেলার নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করি। উক্ত কর্মসূচিতে জনাব একে এম মুরতজা আবেদিনকে দীর্ঘ ৮ মাসে কোথাও পাওয়া যায় নাই এবং তিনি দীর্ঘ বছর যাবৎ জাতীয় পার্টির কোন কর্মসূচিও পালন করেন নাই।’

এম এ জলিল পত্রে উল্লেখ্য করেন, ‘কিন্তু হঠাৎ দেখি গত ইং ২৩/০৯/২০২২ তারিখ সন্ধ্যায় একে এম মুরতজা আবেদিন বরিশাল কীর্তনখোলা মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির ব্যানারে জাতীয় পার্টির মাননীয় কো-চেয়ারম্যান জনাব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রধান অতিথি, মাননীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাবা নাসরীন জাহান রতনা এমপি, বিশেষ অতিথি এবং মাননীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব শফিকুল ইসলাম সেন্টু, বিশেষ অতিথি এছাড়াও যুগ্ম মহাসচিব ফকরুল আহসান শাহাজাদাসহ আরও ৪/৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে মিটিং-এর আয়োজন করা হয়।’

‘যেহেতু বরিশাল জেলা কমিটির ব্যানারে মিটিং হইতেছে সেখানে আমি কোন দাওয়াত পাই নাই এমনকি উক্ত মিটিং সম্পর্কে আমাকে কিছুই না জানানোর পরেও আমি সকল উপজেলার নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়া মিছিল সহকারে সভা স্থলে হাজির হই। জেলার নেতৃবৃন্দ ব্যানারে আমার নাম না থাকা এবং আগামী ২৬ নভেম্বর  ২০২২ তারিখে বিতর্কিত জাপার কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ডাকার বিষয়টি নেতাকর্মীরা ইতিপূর্বে জ্ঞাত হইতে পারিয়া ম্যাডাম রওশন এরশাদের উপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাহারা ঐদিন ম্যাডাম রওশন এরশাদের ছবি ব্যানারে দেখে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আহ্বায়কের নাম ও ছবি থাকিলেও আমার নাম ব্যানারে না থাকাসহ সদস্য সচিব হিসেবে আমাকে অবজ্ঞা করার কারন এবং রওশন এরশাদের ছবি কী উদ্দেশ্যে ব্যানারে দিয়াছে ইত্যাদি বিষয় নিয়া বাগবিতন্ডা ও কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে মাননীয় কো-চেয়ারম্যান মহোদয় মাইক্রোফোন হাতে নিয়া সকল নেতা কর্মীদের শান্ত হতে বলেন।’

জাতীয় পার্টি বরিশাল জেলার সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ জলিল তার পত্রে লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় আমার আকুল আবেদন, বরিশাল জেলার সদস্য সচিব হয়েও জেলা কমিটির ব্যানারে ডাকা মিটিংয়ে আমি কেন দাওয়াত পেলাম না এমনকি মিটিং সম্পর্কে আমাকে না জানানো সদস্য সচিব হিসেবে আমাকে অবজ্ঞা করার কারন তদন্ত সাপেক্ষে আমি এর সুষ্ঠু বিচারের প্রার্থনা করছি। অতএব প্রার্থনা অনুগ্রহপূর্বক অত্র আবেদন গ্রহন করিয়া নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে আমি সুষ্ঠু বিচার পাইতে পারি তাহার বিহীত ব্যবস্থা গ্রহনে মর্জি হয়।’

উল্লেখিত পত্রের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ জলিল কোন প্রকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রের বিবেচনাধীন বিধায় আমার কোন প্রকার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

Recent Comments