দখিনের সময় ডেস্ক:
জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত নবজাতক শুধু মায়ের দুধ পান করে। এ সময় সাধারণত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরপর শিশুকে খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। এই রুটিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দুধ পানের পর সঠিক নিয়মে তাদের বার্প করানো বা ঢেকুর তোলা।
কেন ঢেকুর তুলতে হয়
নবজাতক যখন দুধ টেনে খেতে থাকে, মুখ দিয়ে তখন খানিকটা বাতাসও গিলে ফেলে। এই বাতাস শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে। পেটে অস্বস্তি বোধ করায় শিশু অনবরত কান্না করে, হাত মুঠ করে হাত–পা ছোড়াছুড়ি করে, মুখ থেকে দুধ বের করে দেয়। প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর ঢেকুর তোলালে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
কীভাবে করতে হবে
আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের মতে, শিশুকে প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর বা মাঝে ১০ মিনিট পার হয়ে গেলেই ঢেকুর তোলানো দরকার। মা বা বাবা যে কেউ কাজটি করাতে পারেন। এর জন্য সাধারণত ৩টি পদ্ধতি আছে—
১. শিশুর মাথা সোজা রেখে কোলে নিয়ে শিশুর মুখ নিজের কাঁধের ওপর রাখতে হবে। এক হাতে শিশুর পিঠে হালকা চাপড় দিতে হবে। শিশুকে আরও খানিকটা ওপরে তুলে তার পেট কাঁধের ওপর রেখেও পিঠে চাপড় দেওয়া যায়। এটি বারবার করতে হতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন শিশুর মাথা ও ঘাড় আরেক হাত দিয়ে ভালো করে সাপোর্ট দেওয়া থাকে।
২. শিশুকে কোলের ওপর বসিয়েও হাতের তালু দিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুর তোলানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরেক হাতে শিশুর বুক ও চোয়াল ধরে শিশুকে সাপোর্ট দিতে হবে, যাতে শিশুর মাথা সোজা থাকে। হাতের তালু খানিকটা ভাঁজ করে কাপের মতো করে পিঠে বারবার চাপড় দেওয়া হলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৩. এ ছাড়া শিশুকে হাঁটুর ওপর, উপুড় করে শুইয়ে রেখে পিঠে চাপড় দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও শিশুর থুঁতনি ধরে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে।
নিজের সুবিধামতো যেকোনো একটি বা দুটি পদ্ধতি মিলিয়ে কাজটি করা যেতে পারে।
সতর্কতা
১. প্রতিটি পদ্ধতিতে খেয়াল রাখতে হবে ঢেকুর তোলার সময় শিশুর নাক যেন খোলা থাকে, সে যেন ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে।
২. শিশুকে খুব আস্তে এবং সাবধানে মাথা ও ঘাড়ে সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে।
৩. ঢেকুর তোলার সময় শিশুর মুখ থেকে দুধ বের হতে পারে, তাই কাঁধে বা কোলে একটি নরম কাপড় রাখা ভালো।
কত দিন পর্যন্ত করা জরুরি
শিশু সোজা হয়ে বসতে শিখলে এটা করার আর প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এটা ঘটে থাকে, তবে কারও কারও ৯ মাস পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। যখন মা মনে করবেন দুধ পানের পরপর শিশু আর কান্না ও অস্বস্তি বোধ করছে না, তখন থেকে এটা করার আর দরকার হবে না।