Home লাইফস্টাইল কাশি কমছেই না?

কাশি কমছেই না?

দখিনের সময় ডেস্ক:

মৌসুম বদলের এই সময়ে অনেকের গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি হয়ে থাকেছবি: সংগৃহীত
মৌসুম বদলের এই সময়ে গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি সাধারণ সমস্যা। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাশির সমস্যায় ভুগছেন। অ্যালার্জির ওষুধ, কাশির ওষুধ খাচ্ছেন; কিন্তু পুরোপুরি সারছে না। দীর্ঘদিনের খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। দীর্ঘস্থায়ী কাশি থেকে ঘুম ব্যাহত হতে পারে, ক্লান্তিবোধ থাকতে পারে। এ ছাড়া গুরুতর ক্ষেত্রে বমি, হালকা মাথাব্যথা এবং বুকে ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী কাশিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ক্রনিক কফ। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও শিশুর কাশি যথাক্রমে আট ও চার সপ্তাহের বেশি থাকলে তাকে ক্রনিক কফ বলা হয়।

কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী কাশির কারণ চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো তামাক ব্যবহার, পোস্টনাসাল ড্রিপ, হাঁপানি ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স। অন্তর্নিহিত সমস্যাটির চিকিৎসা করা হলে দীর্ঘস্থায়ী কাশির সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কারণ
১. কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা: কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমায় শুষ্ক কাশি ছাড়া অ্যাজমা বা হাঁপানির অন্যান্য প্রচলিত উপসর্গ (যেমন শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ভাব, বুকে শব্দ) প্রকাশ পায় না। প্রায় ক্ষেত্রে শুষ্ক কাশিই একমাত্র উপসর্গ। সাধারণত এ ধরনের কাশি রাতে বেড়ে যায়। ধুলাবালু, ফুলের রেণু, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ঠান্ডা বাতাস ইত্যাদি কারণে কাশির প্রকোপ বেড়ে গেলে সেটি সাধারণত অ্যালার্জির সমস্যা। অ্যাজমা হয়েছে সন্দেহে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ব্রিদিং টেস্ট নিতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি ইনহেলার ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।

২. পোস্টনাসাল ড্রিপ: পোস্টনাসাল ড্রিপের ক্ষেত্রে নাকে উৎপাদিত তরল ফোঁটায় ফোঁটায় গলায় নিঃসরিত হয়ে প্রতিনিয়ত আলজিব ও ভোকাল কর্ড বা স্বরযন্ত্রকে কাশতে বাধ্য করে। ভাইরাস সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়াল সাইনুসাইটিস, অ্যালার্জি ও অনবরত হাঁচির কারণে পোস্টনাসাল ড্রিপ হতে পারে।

৩. জিইআরডি: পাকস্থলীতে নিঃসরিত অ্যাসিড খাদ্যনালির দিকে চলে আসার সমস্যাকে বলে জিইআরডি (গ্যাস্ট্রোইসোফাজিয়েল রিফ্লাক্স ডিজিজ)। এ সমস্যা থেকে কাশিসহ বুকে জ্বালাপোড়া, মুখে অম্ল (টক) স্বাদ অনুভব হতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজা খাবার, ক্যাফেইন, চকলেট, অ্যালকোহল ও টকজাতীয় খাবার খেলে জিইআরডি উদ্দীপ্ত হয়ে থাকে। শারীরিক স্থূলতা, ধূমপান, বেশি খাবার খাওয়া ও দুর্বল লোয়ার ইসোফাজিয়াল স্ফিংকটারের কারণে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালিতে উঠে আসতে পারে।

৪. শ্বাসনালিতে সংক্রমণ: ভাইরাল সংক্রমণের ফলে অনেক ঠান্ডার উপসর্গ কিছুদিন পরে চলে যেতে পারে, কিন্তু কাশি কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসের জন্য থাকতে পারে। ভাইরাসের কারণে শ্বাসনালি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে এটা হতে পারে। ঋতু বদলের সময় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাশির প্রকোপ বাড়ে।

৫. ওষুধ: কোনো কিছুতে কাশি নিরাময় না হলে ও পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া গেলে লক্ষ করুন কোনো ওষুধের জন্য এটি হচ্ছে কি না। যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের জন্য খুব প্রচলিত ওষুধ এসিইআই। এক–তৃতীয়াংশ রোগী এ ওষুধ সেবনের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশিতে ভুগতে পারেন। যদি এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

সতর্ক থাকুন
দীর্ঘদিনের কাশির সঙ্গে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কাশি ক্যানসার, যক্ষ্মার মতো জীবননাশী রোগের আভাস দিতে পারে। কাশিতে রক্ত। প্রচণ্ড জ্বর অথবা তিন সপ্তাহের বেশি অল্প অল্প জ্বর। শ্বাসকষ্ট। দিনে দিনে ওজন কমে যাওয়া। বুকে ব্যথা। আগে ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়
দীর্ঘদিনের কাশি নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে কফ সিরাপ (কফের প্রকারভেদে কফ সাপ্রেসেন্ট অথবা এক্সপেক্টোরেন্ট দেওয়া হয়), অ্যান্টিহিস্টামিন, কর্টিকোস্টেরয়েড, ডিকনজেস্ট্যান্ট ইনহেলার, অ্যাসিড ব্লকার বা ওমেপ্রাজল সেবন করতে পারেন।

প্রচুর পানি বা জুস পান করুন। অতিরিক্ত তরল সেবনে শ্লেষ্মা পাতলা হবে, যা কাশি কমাতে সাহায্য করবে। চা, স্যুপ, কুসুম গরম পানি আপনার গলাকে আরাম দেবে।

মধু দীর্ঘমেয়াদি কাশির জন্য কার্যকর চিকিত্সা। গরম চা, আদা চা বা আঙুরের রসে মধু যোগ করে প্রতিদিন অল্প করে খান।

যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্স থাকে, তবে ঘুমানোর দু–তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। অতিরিক্ত ভোজন, ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। ওজন কমানো গেলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা অনেক কমে যায়। ঘুমানোর সময় অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে ঘুমান।

শ্বাসনালির আর্দ্রতা বজায় রাখতে বাসায় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন এবং গরম পানি ব্যবহার করুন। ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন। ধোঁয়া, ধুলো এড়িয়ে চলুন। ধুলাবালুতে কাশি হলে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, ঝুল ঝাড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। ঠান্ডায় সমস্যা হলে গোসলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। খুব ঠান্ডা পানি খাবেন না। গলা পরিষ্কার করতে এবং শ্লেষ্মা থেকে মুক্তি পেতে কুসুম গরম পানি লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন। নানা রঙের ফল এবং ফাইবার, ফ্ল্যাভোনয়েড–সমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘস্থায়ী উত্পাদনশীল কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আপনি এবং আপনার শিশু হুপিং কাশি (পারটুসিস) টিকা পেয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করুন।

*ডা. নওসাবাহ্ নূর: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

Recent Comments