Home লাইফস্টাইল তোতলামি কি সারে?

তোতলামি কি সারে?

দখিনের সময় ডেস্ক:

‘তোতলামি’ বলতে আমরা কথা বলার স্বাভাবিকতার ছন্দপতনকেই বুঝি। এমন সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে এক একটি শব্দ বা এক একটি শব্দের ধ্বনি উচ্চারণের মধ্যে অস্বাভাবিক বিরতি দিতে দেখা যায়। কথা বলার সময় কারও কারও মুখ ও দেহের ভঙ্গিও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এই সমস্যার কারণে সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মানুষ হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। কেউ কেউ আবার মানসিক চাপে পড়েও তোতলান।
কী ঘটে?
আমাদের স্বরযন্ত্রে শব্দ উৎপন্ন হলেও তা শ্রুতিমধুর করে তুলতে তালু, দাঁত, জিহ্বা, মুখগহ্বর প্রভৃতির সমন্বয় থাকা আবশ্যক। এই সমন্বয় সাধন এবং কোন ধ্বনির পর কোন ধ্বনি উচ্চারিত হবে তার নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। পুরো প্রক্রিয়ার যেকোনো ধাপে সমন্বয়হীনতা থাকলে ওই ব্যক্তি তোতলামিতে ভোগেন। এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে জিনগত কারণ দায়ী। তোতলামি থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আট বছর বয়সের আগেই দেখা দেয় (মূলত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই)।
ইতিবাচক থাকুন
তোতলামির সমস্যায় ভোগা মানুষের সঙ্গে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা তাঁর মনে আঘাত দেয়। বরং রোগীকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করুন। বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে কিন্তু তোতলা ব্যক্তি পিছিয়ে থাকেন না, শুধু সামাজিক কারণে হীনম্মন্যতার শিকার হয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলে তোতলা ব্যক্তি মঞ্চে উঠে গান-কবিতা-অভিনয়ও করতে পারেন, এমন নজিরও রয়েছে। উইনস্টন চার্চিলের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মেরিলিন মনরোর মতো বিখ্যাত অভিনেত্রীও কিন্তু তোতলা ছিলেন।
তোতলামির কারণে কাউকে ব্যঙ্গ করা যাবে না। তোতলামির অনুকরণ করবেন না। তোতলামির কারণে তাঁর প্রতি রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। একই কথা বারবার বলতে বাধ্য করা যাবে না। তাঁকে নিজের মতো করেই কথা বলতে দিন। তোতলা ব্যক্তি কিছু বলতে চাইলে মন দিয়ে শুনুন। উৎসাহ দিন। উইনস্টন চার্চিলের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মেরিলিন মনরোর মতো বিখ্যাত অভিনেত্রীও তোতলা ছিলেন।
চিকিৎসা
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের তোতলামি আপনাআপনিই সেরে যায়। তাই পাঁচ থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। বাড়িতে একা একা শব্দ করে বই পড়া, রেকর্ড করে নিজেই শোনা—এরকমভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে পরিবারে তোতলামির ইতিহাস থাকলে, তোতলামি সেরে যাওয়ার পর পুনরায় দেখা দিলে, কথা বলার সময় মুখ বা দেহের অস্বাভাবিক নড়াচড়া পরিলক্ষিত হলে এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বিঘ্নিত হলে (যেমন শিশু স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে) চিকিৎসা নিতে দেরি করা যাবে না। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে তোতলামি সারানো সম্ভব। তবে চিকিৎসা নিতে হয় দীর্ঘ মেয়াদে।
*অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান-গলা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

কোথাও সরকারিভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি, দেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে

দখিনের সময় ডেস্ক: সরকারিভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের পাহাড়ি এলাকাতেও বহুমুখী ষড়যন্ত্র থেমে...

দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বিচারক নিয়োগ নীতিমালা: প্রধান বিচারপতি

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট আইনও করা হবে বলে...

গায়েবি মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: আসিফ নজরুল

দখিনের সময় ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিগত...

ইসরায়েলে মশাবাহিত ‘ওয়েস্ট নাইল’ ভাইরাসে নিহত ৭০, আক্রান্ত ৯১৩

দখিনের সময় ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশ লেবানন ও ফিলিস্তিনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে না করতেই, দেশটি নতুনভাবে লেবাননে যুদ্ধ শুরু করেছে। এদিকে, মশাবাহিত...

Recent Comments