দখিনের সময় ডেস্ক
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ৮০টি নতুন দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ইসির গণবিজ্ঞপ্তির মেয়াদ গতকাল শেষ হয়েছে। শেষ দিনে ৪০টি দল আবেদন করেছে। আবেদনের মধ্যে বেকার সমাজ, ইত্যাদি পার্টি, নৈতিক সমাজ, বৈরাবরী পার্টির মতো বাহারি নামের রাজনৈতিক দল রয়েছে। এ ছাড়া আগ্রহী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতের সাবেক নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকা বিডিপি এবং এবি পার্টিও রয়েছে। শেষ দিন আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অফিসারদের দিয়ে কয়েকটা কমিটি করে দেব। সেখানে আমাদের সংবিধান ও আরপিওসহ যেসব বিষয় আছে, তার আলোকে দলগুলো যেসব তথ্য ও ডকুমেন্ট দিয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। আইনি যেসব শর্ত আছে, সেসব শর্ত পূরণ করল কিনা, সেগুলো দেখতে হবে।’ তিনি জানান, কোনো শর্ত যদি অপূর্ণ থাকে, তাহলে তাকে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই। সব শর্তই পূরণ করতে হবে।
ইসি আলমগীর বলেন, ‘হয়তো কালকে কমিশন সচিবালয় ফাইল তুলবে। এরপর তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। তারপর আমাদের কাছে দেবে। আমরা যদি কাগজপত্র দেখে মনে করি, আরও যাচাই করতে হবে, তাহলে সেটা করা হবে। আর যদি ১০০ ভাগ শর্ত পূরণ হয়, তাহলে নিবন্ধন পাবে। সব দলের জন্য সেই একই শর্ত।’ তিনি জানান, যারা নিবন্ধন পাবে তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে, আর যারা পাবে না তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে যে, কোন শর্ত পূরণ না করার জন্য তাদের নিবন্ধন দেওয়া হলো না। ইসির যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালেও নামসর্বস্ব ৭৬ দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। সে সময় কিছু হাস্যকর নাম ছিল। কিন্তু এবার সংখ্যাটা আরও বেশি। ওই সময় নাকফুল বাংলাদেশ, ঘুষ নির্মূল পার্টিসহ অদ্ভুত নামের অনেক রাজনৈতিক দল আবেদন করেছিল।
এবার যেসব দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে- নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টি, মুশকিল লীগ, নতুন বাংলা, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, এবি পার্টি, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, গণ রাজনৈতিক জোট-গর্জো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নতুন ধারা বাংলাদেশ-এনডিবি, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় জনতা পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি-বিএইচপি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনজিপি), জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল), বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গ লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি),বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, সাধারণ জনতা পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি (বিইউআইপি), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল (বিডিপি), মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) ও যুবসমাজ পার্টি। গতকাল রবিবার দুপুরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন গত ২৬ মে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ২৯ আগস্ট। পরে নির্বাচন কমিশন আরও দুই মাস সময় বাড়িয়ে ৩০ অক্টোবর করে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। শর্ত তিনটি হলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত যে কোনো সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীকে একটি আসন পেতে হবে। কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিলে ৭৬টি দল আবেদন করেছিল। তবে কোনো দল ইসির শর্তপূরণ করতে না পারায় নিবন্ধন পায়নি। পরে অবশ্য আবেদনকারী দলগুলোর মধ্যে দুটি আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায়। বর্তমানে ৩৯টি দল ইসিতে নিবন্ধিত রয়েছে।
Post Views:
51