দখিনের সময় ডেস্ক:
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ আবার বিদেশে অর্থ পাচার করছেন। কেউ ঋণখেলাপি হয়ে দেশত্যাগের পথ খুঁজছেন। ইতোমধ্যে অনেকে পালিয়ে গেছেন। খেলাপিদের কেউ কেউ এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। কেউ আবার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।
একবার পালিয়ে গেলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে অর্থ আদায়। এমন পরিস্থিতিতে ঋণখেলাপি গ্রাহকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তাদের বিদেশে পালানো ঠেকাতে পুলিশের সহযোগিতা চাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংক খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশনায় আরও এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসাবে দেখানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের জুন-শেষে অর্থ ঋণ আদালতে বিভিন্ন ব্যাংকের করা মামলার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপিরা বিদেশে পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর খেলাপি ঋণের মামলা ঝুলে আছে। পলাতক খেলাপিদের কাছ থেকে আইনগত প্রক্রিয়ায় ঋণ আদায় না হওয়ায় নতুন করে বাড়ছে ঋণখেলাপির সংখ্যা। ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বর্তমানে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন-শেষে অর্থ ঋণ আদালতে বিভিন্ন ব্যাংকের করা মামলার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি। এর বিপরীতে ঋণখেলাপিদের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
কেসস্টাডি-১
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স (আইএফআইসি) ব্যাংকের গ্রাহক মোহাম্মদ আলী। খেলাপির অভিযোগে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতে তার নামে মামলা করে আইএফআইসি ব্যাংক। মামলায় তার স্ত্রী ও সন্তানকেও আসামি করা হয়। তার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬১ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন চলমান ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বিবাদীদের পাসপোর্ট আদালতে জমা এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয় অর্থ ঋণ আদালত, চট্টগ্রাম। কিন্তু এর আগেই মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী বিদেশে পালিয়ে যান। বাংলাদেশে থেকে যান ছেলে আলী ইমাম। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি আর বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেননি।
চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন শীর্ষ ঋণখেলাপিদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী অন্যতম। ২০টির বেশি মামলায় চট্টগ্রামের ইমাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আলী ও সংশ্লিষ্টদের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে।
কেসস্টাডি-২
ইসলামী ব্যাংকের মহাখালী শাখার গ্রাহক মো. মনির উদ্দিন। তার কাছে ব্যাংকের পাওনা ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। কিন্তু দীর্ঘদিন মনির উদ্দিন মামলায় হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জমা দেওয়া পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাসপোর্টধারী ও ঋণখেলাপি মো. মনির উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভায়। বাবার নাম আলতাফ হোসেন এবং মায়ের নাম মরিয়ম নেসা। ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া যোগাযোগের ঠিকানা বা তথ্য সঠিক দেননি তিনি।
কেসস্টাডি-৩
পেনিনসুলা স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম, তার স্ত্রী রাশেদা জাফর, ছেলে জুনায়েদ আলম ও ভাই আবুল আলমের পাসপোর্ট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, পেনিনসুলা স্টিলের কাছে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের ২৩৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পাওনা। ঋণের বিপরীতে যে জামানত রয়েছে তা দিয়ে এ ঋণের সমন্বয় সম্ভব নয়। তাই ব্যাংকের পক্ষ থেকে পেনিনসুলা স্টিলের এমডি জাফর আলম, তার ভাই আবুল আলম, স্ত্রী রাশেদা আলম ও ছেলে জুনায়েদ আলমের পাসপোর্ট জব্দের আবেদন করা হয়। ওয়ান ব্যাংক ছাড়াও ইস্টার্ন ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে পেনিনসুলা স্টিল। সব ব্যাংকই তাদের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করেছে।
কেসস্টাডি-৪
জনতা ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি আরএসআরএম গ্রুপের কাছে ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা আটকা আছে। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আরএসআরএম গ্রুপের এমডি মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের লালদিঘী ইস্ট কর্পোরেট শাখা। এ গ্রুপের কাছে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২২৬ কোটি টাকা পাওনা তাদের। এর মধ্যে মেসার্স মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের কাছে ৪০৯ কোটি, মেসার্স রতনপুর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৩০৫ কোটি ও এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কাছে ৫১২ কোটি টাকা পাওনা।