দখিনের সময় ডেস্ক:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের বাসার গৃহপরিচারিকা শিশু সুমাইয়া আক্তারকে (১২) অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুটি দোতলা থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। মঙ্গলবার(৩ জানুয়ারী) কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেস বাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই অধ্যক্ষের স্ত্রী তাহমিনা তুহিনকে আটক করেছে পুলিশ। নির্যাতনের শিকার শিশু সুমাইয়া আক্তার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ সরকার বলেন, সুমাইয়ার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীকালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে সুমাইয়া কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জানা গেছে, সুমাইয়াকে মারধর করে গায়ে শরীরে গরম পানি দেওয়ার সময় প্রাণ বাঁচাতে সে দোতলা থেকে লাফিয়ে নিচে লাফ দেয়। নিচে পড়ে গিয়ে সে চিৎকার করলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে ৯৯৯-এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে সুমাইয়াকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু সুমাইয়া আমাদের সময়কে জানায়, সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের মেয়ে ফাহমিদা তিমুর ঢাকার বাসা এবং পরে কুমিল্লার বাসায় চার বছর ধরে কাজ করছে সে। কাজে দেরি হলে প্রায়ই তাহেরের স্ত্রী ও মেয়ে বেত দিয়ে তাকে মারধর করে এবং শরীরে গরম পানি ঢেলে দিতো। গত সোমবার গরম পানি ঢেলে তার পা ঝলসে দেয় তাহমিনা তুহিন। পরদিন গতকাল মঙ্গলবারও মারধরের পর আবারও গরম পানি ঢালতে গেলে সে দোতলা থেকে লাফ দেয়। এরপর পাশের মেয়েদের হোস্টেলে গিয়ে আশ্রয় নেয় সে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হোস্টেলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমরা চিৎকার শুনে এসে দেখি ছোট একটি মেয়ে আমাদের রুমে ঢুকে আশ্রয় চাচ্ছে। তার পা ঝলসে গেছে। পরে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন মেয়েটিকে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয়দের বাধায় পারেননি।’
এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, মেয়েটি আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে। আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি দেবিদ্বারে তার বাড়ি। আমি ও আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ। কিছুদিন আগেও আইসিইউতে ছিলাম। মঙ্গলবার আমি বাইরে ছিলাম। আমার স্ত্রী জানিয়েছে, সে তাকে মারধর করেনি। পাপোষে পা পিছলে পড়ে গেলে একটু গরম পানি গায়ে পড়ে। পাশের হোস্টেলের একটি মেয়ে বিষয়টিকে বড় করেছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ জানান, মেয়েটির পা ঝলসে গেছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।