দখিনের সময় ডেস্ক:
মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ির গতিরোধ করে র্যাব পরিচয়ে দুই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতিকারীরা। এ সময় ভুক্তভোগীদের চিৎকারে জনতা এবং ওই পথে যাওয়া একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় তারা। হাতেনাতে আটক করা হয় চক্রের এক সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় একটি অস্ত্র। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি উপস্থিত পুলিশ সদস্যকেও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চক্রটি।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় ঘটে এ ঘটনা। ভুক্তভোগী একজনের নাম শহীদুল ইসলাম, অপরজনের রিয়াজ। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগ্নে। তাদের অভিযোগ, বিমানবন্দর এলাকা থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিলেন তারা। ফ্লাইওভারে উঠতেই তাদের গাড়ির গতিরোধ করে পেছন থেকে আসা আরেকটি গাড়ি। আরোহী চার ব্যক্তি র্যাব পরিচয়ে অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাদের। এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে করে মারধর। সন্দেহ হওয়ায় চিৎকার শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সাথে জড়িত শহীদুল ইসলাম জানান, ওরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে পিস্তল ধরে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বলে আমরা সোনা চোরাচালানকারী। আমরা বলি আমাদের চেক করে দেখেন। তখন আমাদের মারধর শুরু করে। বলে, গুলি করে মেরে ফেলবো। তারপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। এ সময় আমরা চিৎকার শুরু করি।
তাদের চিৎকার শুনে গাড়ি থামান এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, আমি দেখলাম র্যাব লেখা কোট পরে ৩-৪ জন এই দুই ব্যক্তির সাথে টানাহেঁচড়া করছে। তাদের কোমরে অস্ত্র। আমি এগিয়ে গেলে তারা সরে যেতে বলে। তখন আমি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানাই।
এ সময় গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোনের ডিউটি শেষে সে পথেই মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন সাকিব নামের এক পুলিশ সদস্য। ভুক্তভোগীদের আকুতি শুনে তিনিও এগিয়ে আসেন সহায়তায়।
পুলিশ সদস্য সাকিব গণমাধ্যমকে জানান, আমি এগিয়ে গেলে র্যাবের কোট পরিহিত ব্যক্তিরা আইডি কার্ড দেখায়। আইডি কার্ডের মেয়াদ ছিল না। তখন আমার সন্দেহ হয়। পরে আমাকেও তারা গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে চায়। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। সে সময় আমরা তাদের সাথে থাকা একজনকে ধরে ফেলি।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ভুক্তোভোগীদের ভাড়া করা গাড়ির চালককে নিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় চক্রের এক সদস্যকে জনতা ধরে ফেলে।
আটককৃত ব্যক্তি জানান, তার নাম জয়। বাড়ি দিনাজপুর। তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। তার দাবি, মমিন নামের এক র্যাব সদস্যের সাথে মাদক সংক্রান্ত কিছু কাজে করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। পরে মমিন তাকে দিয়ে আরও কিছু কাজ করায়। ঘটনার দিন একটি অপারেশনের কথা বলে মহাখালী ফ্লাইওভারে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জয় নামের ব্যক্তিটিও তাদের মারধর করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বনানী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। তাদের চাবিতে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্তি মেলে ভুক্তভোগীদের। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি পুলিশ। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া জনসাধারণ।
সূত্র: যমুনা নিউজ