দখিনের সময় ডেস্ক:
১৯২০ সালের ঠিক এমনি এক দিনে (১৭ মার্চ) বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে ধরাধামে আগমন ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ জন্ম শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য ছিল একটি বৃহৎ ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক ডাক নাম ছিল খোকা। বাবা-মা আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। বাল্যকালের সহপাঠী, প্রাথমিক এমনকি মাধ্যমিকের সহপাঠীরাও তাকে খোকা নামেই চিনতেন। তিনি বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় এক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলার আপামর জনসাধারণ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছিল। তিনি তার নির্বিশেষ ভালোবাসা, প্রগাঢ় মমত্ববোধ ও নেতৃত্বগুণে পৌঁছেছিলেন বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। তার এই নির্বিশেষ ভালোবাসা, প্রগাঢ় মমত্ববোধ ও নেতৃত্বগুণের ভিত রচিত হয়েছিল বেড়ে ওঠার সামগ্রীক পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রভাবে।
ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভিতরে উন্মেষ ঘটে নেতৃত্বের আবশ্যকীয় গুণাবলির। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান চাকরি করতেন আদালতে আর মাতা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়ির দক্ষিণের কাছারি ঘরে মাস্টার, পণ্ডিত ও মৌলভী সাহেবদের কাছে ছোট্ট মুজিবের হাতেখড়ি। এরপর তাদের পূর্ব পুরুষদের গড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া। পিতার কর্মস্থল মাদারীপুরের ইসলামিয়া হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে তার বাবা বদলি হয়ে গোপালগঞ্জ গেলে তিনি সেখানে অবস্থিত মিশন হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলায় তিনি অংশগ্রহণ করতেন। ইতিহাসের বই ছিল তার খুবই প্রিয়।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তিনি সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার এই সংগ্রাম নিজে বাঁচার জন্য ছিল না, ছিল অন্যায় হটিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, জাতির মুক্তির জন্য, বাঙালিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের শিখিয়েছেন কিভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সাহস যুগিয়েছেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয় অর্জন করে। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ক্ষমতাসীনদের প্রচন্ড অনীহা দৃশ্যমান হয়। এছাড়াও বাঙালি জাতিসত্ত্বার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশে গণহত্যার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে অনিবার্য হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। এই আহ্বান স্বাধীনতা এবং শোষণ-পীড়ন থেকে মুক্তির বোধ সঞ্চারিত করে সমগ্র জাতির চেতনায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘ঞযরং সধু নব সু ষধংঃ সবংংধমব. ঋৎড়স ঃড়ফধু ইধহমষধফবংয রং রহফবঢ়বহফবহঃ…’। এই ঘোষণার মাধ্যমে পুরো বাঙালি জাতি প্রেরণা পায় মুক্তিযুদ্ধের। ঝাঁপিয়ে পরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বীর বাঙালিরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে ফিরে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম আর একটি বিশেষ গুণ উল্ল্যেখ না করলেই নয়। তিনি কচি-কাঁচাদের ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই তো কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর তাঁর অত্যন্ত প্রিয় সংগঠন হয়ে উঠেছিল। ছোটবেলায় বঙ্গনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তিনি কচিকাঁচার আস
পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল খোকা বড় হয়ে বিজ্ঞ আইনজীবী হবে। কিন্তু না, তিনি ছোট্ট খোকা থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পরিণত হন বঙ্গবন্ধুতে, জাতির পিতায়। বাংলার আকাশে উন্মেষ ঘটে স্বাধীনতার সূর্যসন্তানের—যাকে ছাড়া আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশর স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত।