আলম রায়হান
ইন্টারপোল রেড নোটিশ ইস্যু করার পরও আরাভ খানের দেশে ফেরানো কম বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যাওয়া আরাভ খানকেও দেশে ফেরানো জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আরাভকে ফিরিয়ে আনতে দুবাই ও ভারত কতটুকু সাড়া দেবে- সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, আরাভ খানের (ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদিক) মতো চুনোপুঁটিকে হাইব্রিড রাঘব বোয়াল করা সফল খামারিটা আসলে কে? কেউ বলছেন, অমুক; কেউ বলছেন, তমুক। কেউ বলছেন, আরাভ খান মনে হয় টিকটিকি থেকে টাকার কুমির হয়ে খামারিকেই খেয়ে দিয়েছেন। কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড কোটিপতির কেয়ারটেকার হিসেবে ঢুকে নিজেই শেয়ারহোল্ডার হয়ে এখন আর তাঁকে ফেয়ারলি কেয়ার করছেন না। কেউ বলছেন, হতেই পারে না; অত বড় ক্ষমতাধরদের ‘বাই বাই টাটা’ বলার মতো বুকের পাটা এখনো তাঁর হয়নি; সে এখনও ‘কাজের ছেলে’ই আছে।
প্রসঙ্গত, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় থাকা আরও দুই বাংলাদেশি দুবাইয়ে পলাতক জীবনযাপন করছেন। এরা হলেন- মালিবাগের হোটেল সানরাইজে দুই পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ও ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ জিসান এবং আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ঝুলে থাকলেও ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। কয়েকবার তাদের ফিরিয়ে আনতে তোড়জোড় করা হলেও শেষ পর্যন্ত ফলাফল শূন্য।
আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ভারতীয় পাসপোর্টও বাতিল করতে হবে। দুবাই সরকার আরাভ খানকে বাংলাদেশের কাছে দিতে রাজি হলে তাকে সেখানে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ইস্যু করা ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে ফেরানো যাবে এই অপরাধীকে। বর্তমানে আরাভ খান দুবাই সরকারের নজরদারিতে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুবাইয়ে আরাভ গ্রেপ্তার হলে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরানো সম্ভব। যদি তার নামে ইস্যু করা ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল হয়, তাহলে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ হবে।
আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি লাগবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম বাধা দুবাইয়ের বর্তমান নীতি। উদার বাণিজ্য নীতির কারণে দুবাই বিভিন্ন দেশের ধনীদের স্বর্গরাজ্য। আরাভ খানকে ফিরিয়ে দিলে অন্য ব্যবসায়ী এবং অবৈধ অর্থের মালিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই কোনো আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত দেয়নি। তাই আরাভ খানকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক মনোভাব নাও দেখাতে পারে। এ ছাড়া তিনি দুবাই গেছেন ভারতের পাসপোর্টে। ভারত যদি আরাভের পাসপোর্টকে বাতিল ঘোষণা করে, তাহলে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া ভারতে এমন ভুয়া পাসপোর্ট যে তৈরি করা হয়, সেটা প্রকাশ্যে চলে আসবে। এতে করে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দুবাইয়ে বাইরের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। আরাভকে ফেরত দিলে বিনিয়োগে প্রভাব পড়ার বিষয়টি নিশ্চয়ই দুবাই ভাববে।
মোদ্দা কথা, গত সাত আট বছরে আরাভ খান যে খেল দেখাচ্ছেন, তাতে তাঁকে এত কাঁচা বুদ্ধির লোক মনে করার কোন নারণ নেই। যদি ধরে নেয়া হয়, আরাভের সোনার ব্যবসার পেছনে মহা প্রতাপশালী কেউ আছেন, তাহলে সেই লোক আরাভকে এভাবে প্রচার চালাতে দিলেন কি কারণে? তাহলে কি এ ক্ষেত্রে ‘পাপে ছাড়ে না বাপেরেও’ বিষয়ক ঘটনা ঘটে থাকতে পারে? নাকি অন্য কেউ আছেন? আর ‘ঠাকুর ঘরে কেরে, আমি কলা খাই না’- এ রকম কান্ড ঘটালেন কেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজির আহমেদ!