Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর শিক্ষকতা ছেড়ে অন্তর্বাসের মডেল গীতা জে, বয়স ৫০

শিক্ষকতা ছেড়ে অন্তর্বাসের মডেল গীতা জে, বয়স ৫০

দখিনের সময় ডেস্ক:
শিক্ষক গীতা জের বয়স ৫০ বছর। এ বয়সে অনেকেই তো অনন্ত অবসরজীবনের স্বপ্নে মশগুল থাকেন। অনেকে আবার ঘরসংসারে বেশি করে মন দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দেন। কিন্তু কর্মজীবনের প্রায় শেষলগ্নে পৌঁছে অবসরের নিশ্চিন্ত জীবন বেছে নেননি গীতা জে। পঞ্চাশে পৌঁছে প্রাক্‌-প্রাথমিকের স্কুলশিক্ষিকার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন গীতা জে।  এমন এক পেশায় নতুন করে শুরু করেছেন, যাতে সচরাচর তাঁর বয়সি মহিলাদের দেখা যায় না।
গীতা জে শুরু করেছেন মডেলিং। তবে কোনও বয়স্ক মহিলার চরিত্রে নিজের মুখ দেখাননি। বরং অন্তর্বাসের মডেল হিসাবে নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাড়করিয়েছেন। অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে সব সময়ই কমবয়সিদের দেখা যায় কেন? এ পেশায় কি চল্লিশ পেরোনো মহিলাদের কোনও চাহিদাই নেই? চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায় ঢুকে পড়া মানেই কি বয়স্কদের খাঁচায় নিজেকে বন্দি করে রাখতে হবে? এমন নানা প্রশ্ন তুলেছেন গীতা।
অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে খোলামেলা পোশাকে কমবয়সি মেয়েদের মডেল হিসাবে দেখতেই অভ্যস্ত আমজনতা। তবে গতে বাঁধা এ ধারণার নেপথ্যে পুরুষতন্ত্রের হাতও রয়েছে বলে মত গীতার। গীতার বলেন, আমাদের মতো দেশে পুরুষতন্ত্রের শিকড় যে অনেক গভীরে রয়েছে, তা জানি। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মহিলারা যে ‘ভদ্রসভ্য’ পোশাক পরবেন, এটাও যেন আমাদের মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়। ফলে সেই অভ্যস্ত ধারণাকে রাতারাতি বদলে ফেলাটা সহজ নয়। এবং সে বদল ঘটাতে গেলে সময়ের প্রয়োজন।
নানা ‘বেয়াড়া’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই মডেলিং জগতে ঢুকে পড়েছিলেন পঞ্চাশে পা রাখা গীতা। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল, মডেলিং করা। জীবনের পঞ্চাশ বসন্ত পার করে সে স্বপ্নপূরণের পিছনে ছোটা শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালে ‘ইন্ডিয়া ব্রেনি বিউটি’ নামে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। প্রথম সুযোগেই দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে যান। তার পর চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে অন্তর্বাসের মডেলিং শুরু করেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অনেকের নজর তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘ইন্ডিয়া ব্রেনি বিউটি’ নামে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
প্রথম সুযোগেই দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে যান গীতা জে। তার পর চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে অন্তর্বাসের মডেলিং শুরু করেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অনেকের নজর তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালে সংবাদমাধ্যমের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে গীতা বলেছিলেন, ‘‘বছর দেড়েক ধরে মডেলিং করছি। মডেল হওয়ার স্বপ্নপূরণ করার ইচ্ছেও ছিল। তবে পড়াশোনার শেষে পেশা বাছাইয়ের সময় মডেলিংয়ের কথা ভাবতে পারিনি। সে সময় এমন কথাও শুনতে হয়েছে যে, সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা কখনও মডেলিং করেন না। গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখা মেয়েদের জন্য ঠিক নয়।
গীতা আরও বলেন, পঞ্চাশে পৌঁছে নিজের স্বপ্নপূরণের সুযোগ এসেছে। ছিল। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হওয়ার পর ফোটোগ্রাফারদের নজরে পড়েছিলাম। সে সময় নিজের পোর্টফোলিয়ো তৈরি করি। মডেলিং এজেন্সি থেকে ডাক আসতে শুরু করে। দিল্লির এক ফোটোগ্রাফারের হয়ে মডেল হিসাবে প্রথম বার শুট করি। প্রথম ফোটোশুটে একটি নামী ব্র্যান্ডের অন্তর্বাসের মডেল হয়েছিলেন গীতা। পঞ্চাশোর্ধ গীতাকে স্বল্প পোশাকে দেখে সমাজমাধ্যমে বেশ হইচই শুরু হয়। প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনার তিরও ধেয়ে এসেছিল তাঁর দিকে।
গীতা বলেন,  অন্তর্বাসের মডেল হিসাবে নিজের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতেই অনেকে বাহবা দিয়েছিলেন। তবে কয়েক জন এমন মন্তব্যও করেছিলেন, সস্তা জনপ্রিয়তার জন্যই এ ভাবে জামাকাপড় খুলে ইন্টারনেটে ছবি দিচ্ছি।  এক জন তো লিখেছিলেন, নিজের বয়স লুকোনোর জন্যই এ ধরনের পোশাক পরছেন। আর এক জনের মন্তব্য ছিল, ‘সস্তা’। তবে সদর্থক মন্তব্যগুলোকেই গুরুত্ব দিয়েছিলাম।’’
গীতার বলেন, ‘আমি একা নই। আমার মতো বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা বদল ঘটাতে চান। সমাজমাধ্যমের মন্তব্যগুলি পড়ে এমনই মনে হয়েছিল। তাঁরাই এটা ভাবতে বাধ্য করিয়েছিলেন, এ দেশের বিজ্ঞাপন জগতে অন্তর্বাসের মডেল হিসাবে বয়স্কদের জায়গা নেই, এই বাস্তবতার বদল ঘটানো প্রয়োজন। অন্তর্বাসের মডেলিং করেই থেমে থাকেননি গীতা। সেই সঙ্গে বয়স্কদের এ পেশায় আসার পথ সুগম করতেও তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলেন। ‘চেঞ্জ ডট অর্গ’ নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে পিটিশন দাখিল করেন গীতা। তাতে তাঁর প্রশ্ন ছিল, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মহিলারা কি আর অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার উপযুক্ত থাকেন না?’
। ওই অনলাইন আবেদনে গীতার পক্ষে প্রভূত সাড়া পড়ে। প্রায় ১১ হাজার মানুষ গীতার পক্ষে স্বাক্ষর করেন। একটি অন্তর্বাস সংস্থার নামী ব্র্যান্ডের চিফ এ‌গ্‌জ়িকিউটিভকে ওই স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনটি পাঠানো হয়ে। গীতার দাবি, এ দেশের মানুষজনের চিন্তা-ভাবনায় বদল ঘটাতে পারে এ ধরনের প্রশ্ন। যাঁরা ভাবেন, চল্লিশ পেরোনো মহিলাদের একটি নির্দিষ্ট ভাবে পোশাক পরা বা আচরণ করা উচিত।  সাফল্য এলেও নিজের ‘লক্ষ্য’ থেকে দূরে সরেননি গীতা। তাঁর কথায়, মহিলাদের এটাই বলতে চাই, স্বামীদের স্বপ্নের খেয়াল রাখুন। তবে নিজেদের জীবনকে গুরুত্বহীন মনে করবেন না। কারণ আপনার ইচ্ছারও দাম রয়েছে।
খবর সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

দংশন করা সাপে ছবি তুলে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দখিনের সময় ডেস্ক: চিকিৎসকরা মূলত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সাপে কামড়ানোর সময় সেটি কী প্রজাতির সাপ বা...

গরমের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু

দখিনের সময় ডেস্ক: রাতে তীব্র গরমের হাত থেকে বাচতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসেছিলেন ইমামুল ব্যাপারী (৩৪)। এ সময় তাকে বিষধর সাপে কামড় দেয়।...

গরমও আসে ভারত থেকে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের...

বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, আর বাড়বে না তাপমাত্রা

দখিনের সময় ডেস্ক: নতুন করে তিন দিনের হিল অ্যালার্ট জারি হলেও চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি...

Recent Comments