Home বরিশাল ঘর গোছাচ্ছে আ.লীগ, শক্ত অবস্থানে অন্য প্রার্থীরা

ঘর গোছাচ্ছে আ.লীগ, শক্ত অবস্থানে অন্য প্রার্থীরা

বিশেষ প্রতিবেদক :
গত শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে জমে উঠেছে আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আলোচনা। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত এর মনোনয়ন প্রাপ্তি চমক হিসেবেই দেখা দিয়েছে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে দিনশেষে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে জয়যুক্ত করতে একতাবদ্ধ হওয়া শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া অনেক নেতাই নতুন করে চাঙা হচ্ছে রাজনীতির মাঠে। তবে ভোটের মাঠে একচুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। যে যার জায়গা থেকে শাণিত করছে নিজের জয়ের পরিকল্পনাকে।
আওয়ামীলীগের বাইরে দল হিসেবে জাতীয় পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ঘরানার একজন প্রার্থী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে। নিজ নিজ জায়গা থেকে সব দল এবং প্রার্থীরা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এদিকে মনোনয়ন পাবার ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জন্য মাঠে নামে নি। যা নিয়ে শহরের রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) পক্ষে শনিবার বিকেল থেকেই আনন্দ মিছিল ও মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করেছে একটি পক্ষ। তাদের সঙ্গে দেখা গেছে দীর্ঘদিন দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় অনেককে৷
দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করা হচ্ছে জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামীলীগ নেতা এনামুল হক বাহার বলেন, ‘নৌকার পক্ষে বরিশালের আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী একসঙ্গে কাজ করবে। সকলকে সমন্বিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সকলেই বিশ্বাস করি যে দিনশেষে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নেই। ইতোমধ্যে আমরা দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি’।
দীর্ঘদিন যাবৎ যারা শহরের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল তাদের পুনরায় সক্রিয় হবার ব্যাপারে
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন,’ দল একজন যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করেছেন। তার কাছে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীর মূল্যায়ন রয়েছে। যে কারণে আওয়ামীলীগের যেসব নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় ছিল তারা পুনরায় রাজনীতির মাঠে ফিরছে। আমরা সকলেই চেষ্টা করবো তাকে ভোটে জয়যুক্ত করার’।
আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ‘ খোকন সেরনিয়াবাতের মনোনয়ন প্রাপ্তি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীকে এক ছাতার নিচে আনবে বলেই মনে করি। ইতোমধ্যে তার পক্ষে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা কাজ শুরু করেছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আনন্দ মিছিল বের করেছে সমর্থকগোষ্ঠি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে নৌকার মাঝিই পুনরায় নগরপিতার আসন অলংকৃত করবে’।
আর দলের সকলকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ জানিয়ে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বলেন, ‘ নৌকা প্রতীক আমার ব্যক্তিগত কিছু না। এটা আওয়ামীলীগের প্রতীক। আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মী মিলেমিশে এই প্রতীককে জয়যুক্ত করার ব্যাপারে কাজ করবে। ইতোমধ্যে দলীয় হাইকমান্ড থেকে স্থানীয়ভাবে সকলের সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে’।
তবে আওয়ামী শিবিরের এই আনন্দ উদযাপন বা ভোটে জেতার সম্ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনের ফল নিজেদের দিকে টানার সব রকম পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ভিন্ন দলের অন্য প্রার্থীরা। পরিবর্তনের স্বপ্ন ফেরি করছে তারা সাধারণ মানুষের কাছে৷ ২০২২ সালেই সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইকবাল হোসেন তাপসকে মনোনীত করে জাতীয় পার্টি। সেই থেকে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
নগর জাতীয় পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও তার ব্যাপারে আশাবাদী। ২৫ নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, দল থেকে মনোনীত হবার পর গত একবছরে পুরো নগরীর জাতীয় পার্টির কর্মীদের সংগঠিত করেছে ইকবাল হোসেন তাপস। তাই বিগত দিনের চেয়ে এবার তাদের দল ভোটযুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।
একই সুর শোনা গেলো ইকবাল হোসেন তাপসের কন্ঠেও। তিনি বলেন,’ বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে বরিশালে এখন জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। নগরবাসী একটা পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। আশা করছি আমার দলের হাত ধরেই বরিশালে সেই পরিবর্তন আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জয়ের ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী’।
এছাড়া বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে নগর শাসনের চাবি হাতে রাখতে টেক্কা দিতে হবে ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামের চরমোনাই পীরের দলটির সঙ্গেও। দক্ষিণাঞ্চলে এমনিতেও তাদের সমর্থক গোষ্ঠী বেশি। এরমধ্যে বিগত দিনে এ অঞ্চলের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দলটির প্রার্থীরা ভালো ফলাফল করেছে। শহর লাগোয়া একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ তাদের দখলে। ফলে এ দলের নেতাকর্মীরা সিটি নির্বাচনেও ভালো ফলাফলের আশাবাদী। এখন পর্যন্ত তারা প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ এছহাক মোঃ আবুল খায়ের এর নাম শোনা যাচ্ছে দলটির একাধিক সূত্র থেকে।
এ ব্যাপারে দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর ও মহানগর শাখার সভাপতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার (২৬ শে রমাদান) আমরা প্রার্থী ঘোষণা করবো৷ নগরীর সঠিক উন্নয়ন করতে পারবে, দলমতের উর্ধ্বে থেকে সকলের সেবা করতে পারবে এরকম গুণেমানে যোগ্য প্রার্থী নিয়েই মাঠে থাকবো আমরা। একইসাথে আমাদের বিশাল কর্মী বাহিনী ভোট পাহারায় থাকবে। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করবো বলে আশা রাখছি’। নিজেই প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আকাশে চাঁদ উঠলে তো সবাই দেখতে পাবে।
নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক মেয়র ও বিএনপির প্রয়াত নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন। দলে তার কোন পদবি না থাকলেও নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে দাবি করছেন তিনি। ভোটের মাঠে আওয়ামীলীগ বিরোধী ভোটাররা তার পক্ষে এককাট্টা হবেন বলে মনে করছেন তরুণ এই নেতা। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন বরিশালের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। সেই জায়গা থেকে নগরবাসী পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। তাদের সেই প্রত্যাশাই আমাকে জয়যুক্ত করতে সাহায্য করবে’।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কি ভাবছে এই প্রশ্নের জবাবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে আমরা অংশ নিচ্ছি না।তাই বলা যায় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই’। তবে প্রার্থী না থাকলেও ভোটার তো রয়েছে। তারা কি করবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘ মানুষকে তো ভোট দেবারই সুযোগ দেয় না বর্তমান সরকার। তবুও কেউ যদি ভোট দেবার সুযোগ পায় তবে অবশ্যই সেই ভোট নৌকার প্রার্থী পাবে না ‘।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ই জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও গত শনিবার দল থেকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। বিএনপি সরাসরি মাঠে না থাকায় ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হবার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

আপনাদের নেত্রী আর কখনো দেশে ফিরবেন না:  মাওলানা রফিকুল ইসলাম

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রায় সময় বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা শুনি, উনি (শেখ হাসিনা) নাকি...

Recent Comments