Home জাতীয় অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আল্লাহ সহ্য করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আল্লাহ সহ্য করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক:
যারা অগ্নি-সন্ত্রাস করছেন আল্লাহ তাদের সহ্য করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার গণভবনে ঈদপূর্ববর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানের শাসনের সময়ে কীভাবে বিনা বিচারে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসময় ভুক্তভোগী কয়েকজনের পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব ঘটনার বিচার চান। এছাড়া আন্দোলনের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রানের ওপর নির্মিত আরেকটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। সেই সময়ের কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য রেখে এই ঘটনার বিচার চান। অনুষ্ঠান শেষে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন ব্যবসায়ীও ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘১৯৭৭ সালে যাদের হত্যা করেছে, ৭৫ সালের পর থেকে যাদের হত্যা করা হয়েছে, মানুষ তো এগুলো ভুলে যাচ্ছিল। এটা আজকে মানুষের সামনে আসছে যে জিয়াউর রহমান কি অপরাধ করেছে। জিয়া যেমন করল, তার বউ করল এবং তার ছেলেরা মিলে পরে এই অগ্নি-সন্ত্রাস করল। এরা এদেশের কোনো মঙ্গল চায় না, এরা এদেশের মানুষের কোনো ভালো চায় না। এটাই হলো বাস্তবতা।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমার আব্বা সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন। আমার একটাই চেষ্টা দেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে মানুষ যখন একটু ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, একটু অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে, ঠিক সেসময় আবারও অগ্নি-সন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষকে ক্ষতি করা…। এটা যারা করে এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আমার মনে হয় আল্লাহ সহ্য করবেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা যে অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে। দিনের পর দিন ফাঁসির ঘটনা, বিদেশ থেকেই খবরগুলো শুনতাম। জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করল। কোনো অপরাধ নেই জানে, তারপরও ধরে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া। পাকিস্তানি বাহিনী যেমন বর্বরতা চালিয়েছিলে এই বিএনপি-জামায়াতও একই বর্বরতা চালায়। জিয়াউর রহমান তো হাসতে হাসতে নাকি ফাঁসির রায় লিখত। কোনো বিচার নাই। ফাঁসি দেওয়া হয়ে গেছে। বিচারের রায় বের হয়েছে পরে। কি জুলুম! কি অত্যাচার! কি অন্যায়!’ ভুক্তভোগীদের কথা শোনার পরে প্রধানমন্ত্রীর তার বক্তব্যে পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে শুরু হওয়া হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বিরোধীদলে ছিলাম এমন একটা দিন নাই যে লাশ টানতে হয়নি। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এরপরও কি করে এদের পাশে লোক থাকে? আমি বুঝে উঠতে পারি না’ ২০১৩ সালের পরবর্তী সময়ের অগ্নি-সন্ত্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটা জীবন্ত মানুষকে কিভাবে পোড়ানো যায়? যাদের কোনো অপরাধ নেই। বুঝলাম আওয়ামী লীগের যারা রাজনীতি করেছে, তাদের তারা মেরেছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তাদের ওপর এই জলুম অত্যাচার কেন?’ সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার এখন দেখেন, কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই যেন মার্কেটে আগুন লাগাটা বেড়ে গেল। হঠাৎ আমার মনে সন্দেহ লাগল এটাও কি নাশকতা নাকি? যারা গাড়িতে আগুন দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে, রিকশায় আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পোড়াতে পারে এরা মানুষের ক্ষতি করাটাই জানে। ঈদের সময় মানুষ একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, সেই পথটাও যেন তারা বন্ধ করে দিতে চায়। আমার তো মনে এখানেও কিছু এটা ঘটনা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হয়েছেন শুধু এটুকু বলতে পারি তাদের স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নাই। আমি আপনাদের মতো, হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নেই। বিদেশে বোনকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় ছয় বছর রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। কাজেই আমরা এই কষ্টটা বুঝি।’ বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকু বলব যারা এই অন্যায় করেছে তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে। সেটা আমরা করব।’ নিজেকে স্বজনহারা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো একজন স্বজনহারা। আমি চিন্তা করলাম যারা আমার মতো স্বজনহারা তাদের সঙ্গে একটু মতবিনিময় করব, দেখা করব, সেজন্যই আপনাদেরকে কষ্ট করে ডাকা।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৩৫ বছর লেগেছে আমার বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। কারণ আইন করে দিয়েছিল। আমি দেশে ফিরে আসলাম, আমি মামলা করতে পারব না, বিচার চাইতে পারব না। সেই খুনিদের এভাবে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। আমরা সরকারে আসার পর ইনডেমনিটি বাতিল করে বিচার করতে গেছি সেখানেও তো কত বাধা। জজসাহেবরা রায় দিতে যেতে পারেন না, বোমা মারে। হরতাল ডাকে, অনেক জজসাহেবরা বিব্রতবোধ করেন। এটাও আমাকে দেখতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে এতগুলো মানুষ হত্যা হলো তার বিচারের রায়টা দিতেও তারা লজ্জাবোধ করেন। আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি, কারণ আমিও তো একই কষ্ট পেয়েছি। যেটুকু পারি আমি আমার তরফ থেকে করে যাব।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বাংলাদেশের অন্তর্যামী কে

এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, মূল ক্ষমতা নিজ হাতে রেখে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তভাবে দেশ চালাচ্ছেন। এরপরও প্রশ্ন আছে, প্রধানমন্ত্রী কাদের মাধ্যমে দেশ...

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ

দখিনের সময় ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। রাজভবনে কর্মরত অস্থায়ী এক নারী কর্মচারী এই অভিযোগ এনেছেন। ইতিমধ্যেই কলকাতার হেয়ার...

রহস্যঘেরা মিল্টন সমাদ্দার, বের হচ্ছে ভয়ংকর সব তথ্য

দখিনের সময় ডেস্ক: মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব অপকর্মের অভিযোগ ওঠায় মিল্টন সমাদ্দারকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি...

ইন্টারনেট ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো যাবে ছবি-ফাইল

দখিনের সময় ডেস্ক: বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ। অনেকেই ব্যক্তিগত বা অফিসের প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। প্রতিদিন...

Recent Comments