Home বরিশাল বরিশালে মেয়রপ্রার্থীদের হলফনামা: কেউ স্বশিক্ষিত, কেউ প্রতারণা মামলার আসামী

বরিশালে মেয়রপ্রার্থীদের হলফনামা: কেউ স্বশিক্ষিত, কেউ প্রতারণা মামলার আসামী

দখিনের সময় ডেস্ক:
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সমাগত, ১২ জুন ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে ১০ জন মেয়রপ্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিরেন। প্রার্থি হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, জাতীয় পার্টি মনোনীত ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত সৈয়দ ফয়জুল করিম, জাকের পার্টি মনোনীত মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং স্বতন্ত্র পদে কামরুল আহসান রুপন ও আলী হোসেন হাওলাদার টিকে আছেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলফনামার সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে লড়াই করা ৬ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। তিনি সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। রুপন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম ফিকাহ শাস্ত্রে কামিল পাস করেছেন (স্নাতকোত্তর সমমানের)। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস উল্লেখ করেছেন তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক। জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু এইচএসসি পাস। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার স্ব-শিক্ষিত।
ছয় প্রার্থীর মধ্যে  শুধু জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বর্তমানে মামলার আসামি। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের হওয়া দুটি প্রতারণা মামলার আসামি। যদিও মামলা দুটির রায় না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন। তিনি আরও বেশ কয়েকটি দেওয়ানি মামলার আসামি। তাপস ছাড়া ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করিম পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন। যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। অন্য চার প্রার্থী কোনো মামলায় আসামি বলে উল্লেখ করেননি। ৬ প্রার্থীর মধ্যে  কেবল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দুটি অস্ত্রের মালিক। সম্পদেও সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
 আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ
৬৬ বছর বয়সী প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ তার আয়ের প্রধান উৎস দেখিয়েছেন ব্যবসা। অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। এটি জাহাজের মালামাল বোঝাই ও জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করার কাজে নিযুক্ত লোকবল সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে বাৎসরিক আয় করেন ৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫০ টাকা। যা প্রার্থীর ওপর নির্ভশীলদেরও আয় হিসেবে দেখিয়েছেন। যৌথ ব্যবসার ১০ শতাংশ লভ্যাংশে বাৎসরিক আয় ১,৬৭২ টাকা। ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা। নিজের নামে নগদ জমা রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭২ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর নামে রয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭২ টাকা, স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহর নামে রয়েছে ১২ হাজার ৩৯৭ টাকা। শেয়ার মালিক রয়েছেন ২০ লাখ টাকা।
এছাড়া নিজের ও স্ত্রীর নামে একটি করে গাড়ি রয়েছে। যেখানে নিজের গাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ এবং স্ত্রীর ৪৯ লাখ টাকা। প্রার্থী নিজে ১০ ভড়ি ও স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ ২০ ভরি স্বর্ণের মালিক। যা সমস্তই উপহার হিসেবে পেয়েছেন। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ৩ লাখ ২৫ হাজার ও স্ত্রী ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রির মালিক। আসবাবপত্রের অর্থমূল্যর দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার এবং স্ত্রী ২ লাখ ৫০ হাজার। লাইসেন্সকৃত একটি এনপিবি পিস্তল ও একটি শটগানের মালিক তিনি। তিনটি ভবনের মালিক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। এরমধ্যে খুলনায় ৪০ লাখ টাকা সমমূল্িেযর ৪ তলা দালান, ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা সমমূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও উত্তরায় ৬টি অ্যাপার্টমেন্ট মূল্য দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ টাকা।
কামরুল আহসান রুপন
৩৯ বছর বয়সী স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপনের প্রধান আয়ের উৎস মৎস্য, পশু ও কৃষি খামার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন লিমিটেড। তার  ব্যবসা থেকে আয় হয় ৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫ টাকা। ব্যাং কসুদ বাবদ ১,৯৩৬ টাকা। নগদ ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৫ টাকার মালিক। ব্যাংককে জমা ১২ হাজার ১৬৫ টাকা। তার প্রতিষ্ঠান রিভার আইল্যান্ড ইন্টিগ্রেশন এক কোটি টাকা মূল্যের শেয়ারের মালিক। ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি গাড়ির মালিক। তিনি মা ও বোনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা লোন নিয়েছেন।
 ইকবাল হোসেন তাপস
৫৭ বছর বয়সী মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা। এর মধ্যের ইওকোহামা লেবেলস অ্যান্ড প্রিন্টিং কোম্পানির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশীদার। পাশাপাশি সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সাউথ এ্যাপোলো প্রপার্টিজের পরিচালক। এই পরিচালক পদের সম্মানী হিসেবে বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বেতন বাবদ বছরে আয় ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৭ টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফা বাবদ আয় ১,১৯৬ টাকা। তিনি ২ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকার মালিক। ব্যাং কে জমা ৬৫ লাখ ৩২ হাজার ২৪ টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ারমূল্যর ১২ লাখ ৫০ হাজার, মেডিকেল কলেজের ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার, প্রোপার্টিজে ১৫ লাখ টাকা। নিজের ৩৮ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে। উপহার বাবদ পাওয়া ৬০ তোলা স্বর্ণ, উপহার হিসেবে পাওয়া ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি ওভেন। ৫১ হাজার ৫৬৫ টাকার আসবাবপত্রের পাশাপাশি উপহারের আসবাবপত্রও রয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪ তলা ভবন। প্রাইম ব্যাংকের কাছ থেকে গৃহ সংস্কার ঋণ বাবদ ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৫ টাকা নিয়েছেন।
 সৈয়দ ফয়জুল করিম
৫০ বছর বয়সী ইসলামি আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিমের আয়ের প্রধান উৎস চাকরি। তিনি চরমোনাই আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস বা হাদিস বিশারদ। তার এ্যা ডিপার্টমেন্ট থেকে বছরের আয় হয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। শিক্ষকতা পেশায় আয় ৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। ফয়জুল করিম ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৩ নগদ টাকার মালিক। ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৬৯ টাকা। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রির মালিক থাকলেও তার উৎস উল্লেখ করেননি।
৮২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ কৃষি জমির এবং ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক দালান রয়েছে একটি এবং দুটি এ্যা পার্লামেন্ট।
 আলী হোসেন হাওলাদার
৬০ বছর বয়সী প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদারের প্রধান আয়ের উৎস তার মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলী এন্ড ব্রাদার্স। তার বাড়ি ও দোকান ভাড়া দিয়ে বৎসরে আয়ে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৩ টাকা। নগদ ৫০ হাজার টাকার মালিক। ব্যাং কে জমা ১৮ লাখ টাকা। দুটি ট্রাক, একটি মোটরগাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেলের মালিক। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ২০ ভরি স্বর্ণের মালিক। এছাড়া আসবাব ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মালিকানা রয়েছে। তিনি দোকান স্থাপনের জন্য ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কৃষি জমি পৈত্রিক সূত্রে ৩ একর এবং ইজারা নিয়েছেন ২ একর। অকৃষি জমির মালিক ৫৬ শতাংশ। একটি ভবনের মালিক। উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ।
মিজানুর রহমান বাচ্চু
৬৮ বছর বয়সী মিজানুর রহমান বাচ্চুর আয়ের প্রধান উৎস আবাসিক হোটেল ব্যবসা ও গৃহ-সম্পত্তি আয়। তিনি ঘরভাড়া বাবদ বছরে ৬ লাখ ৬ হাজার ৯৮০ টাকা ও দোকান ভাড়া দিয়ে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ টাকা আয় করেন। আবাসিক হোটেল থেকে আয় করেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার কোনো নগদ টাকা না থাকলেও স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ ও ব্যাংকে ছেলের নামে জমা ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন।
নিজের একটি প্রাইভেটকার ও একটি মটরসাইকেল রয়েছে। ছেলে ১০ টাকা ও স্ত্রী ৮ ভরি স্বর্ণের মালিক। তার ব্যথা।বসার মূলধন ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৭ শ টাকা। নিজের নামে অকৃষি জমি ২৩ শতাংশ, স্বামী-স্ত্রীর নামে সাড়ে ৪ শতাংশ ও যৌথ মালিকানার ২১ শতাংশের এক অংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

গোয়েন্দা নজদারীতে নতুন ডিসিরা

দখিনের সময় ডেস্ক: এদিকে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে একের পর এক ঘটনার জন্ম হওয়ার প্রেক্ষাপটে সারা দেশের নতুন ডিসিরা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এদিকে ক্রমশঃ জটিল হচ্ছে...

মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি, মুম্বাই অভিমুখে মুসলিমদের যাত্রা

দখিনের সময় ডেস্ক: ক্ষমতাসীন বিজেপির এমএলএ এবং এক ধর্মীয় গুরুর বিচারের দাবিতে র‌্যালি নিয়ে মুম্বাইয়ে গেছেন ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেনন...

নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক, বাইডেন-ইউনূসের বৈঠক

দখিনের সময় ডেস্ক: স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কখনও ভালো, কখনও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। গত এক দশকে বিভিন্ন ইস্যুতে সেই সম্পর্ক একেবারে তলানীতে গিয়ে...

শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি চর্চার আহ্বান ছাত্রদল সেক্রেটারির

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার দৈনিক কালবেলার সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নাসির...

Recent Comments