বিশেষ প্রতিনিধি:
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বহু বছর বরিশালের বাইরে কাটার পর নিজ ভূমে ফিরে এসেছেন প্রায় বছরখানেক আগে। বিসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি বরিশালের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন। তার চেয়ে বেশি হাটেন তার স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ।
বিসিসি নির্বাচনে মেয়রপদে প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে এসেছিলেন জেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য। এ জন্য বরিশাল নগরীর কালু শাহ সড়ক এলাকায় ‘জজ সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত একটি ভবনের ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে দৈনিক দখিনের সময়-এ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। পেয়েছেন আবুল হাসানাত অবদুল্লাহর বিশেষ আস্থাভাজন এ কে এম জাহাঙ্গীর। আগের বারেও মনোনয় পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে সমধিক পরিচিত এবং ‘নানান গুণের’ জন্য বিশেষভাবে খ্যাত মাইদুল ইসলাম। তিনিও আবুল হাসানাত আবদুল্লার বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবেই এই মনোনয়ন লাভ করেন এবং মেয়াদ শেষে বরিশাল থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।
ঘোষিত তফসিল অনুসারে বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো গত ১৭ অক্টোবর। কিন্তু ভোটাভুটির আর কোন দরকার পড়েনি। কারণ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এ কে এম জাহাঙ্গীর ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত’ হয়েছেন। অবশ্য অভিযোগ আছে, রাজনীতির দানবীয় প্রভাব বিস্তার করে অন্য কাউকে প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি। এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের । ‘কেনো প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন’ এমন প্রশ্ন একাধিক বার করা হলেও গণমাধ্যমকে কোনো উত্তর দেননি সাংবাদিক আসাদুজ্জামান। কেবল বলেছেন, ‘সময় হলে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানাবো।’
উল্লেখ্য, বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবার ব্যাপারে গ্রীন সিগনাল পেয়ে বরিশালে এসেছিলেন খোকন সেরনিয়াবাত। এমনকি এর আগে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তার প্রার্থী হবার বিষয়টি আলোচনায় এসেছিলো। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁকে না করে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড প্রার্থী করেছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। তখন প্রচার করা হয়েছিলো, বরিশালের মেয়র পদ যেকোন বিবেচনায় অধিকতর জটিল, কঠিন ও গভীরভাবে রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ অধিকতর উপযুক্ত। কিন্তু যখন সময় এলো তখন তিনি বঞ্চিত হলেন। তাঁর ললাটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মনোনয়ন জোটেনি।
এর আগের মেয়াদে জেলা পরিষদে নির্বাচনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান খান আলতাফ হোসেন ভুলু। কিন্তু পরে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। এরপরও তিনি প্রার্থী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রার্থী হন জাতীয় পার্টি থেকে আসা বরিশালের রাজনীতিতে অনেকটা বহিরাগত মাইদুল ইসলাম। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এ দুইজনের কাউকেই দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়া হয়নি। দুজনের জন্যই নির্বাচন উম্মুক্ত ছিলো। এ নির্বাচনে মাইদুল ইসলাম ‘বিজয়ী’ হন। অবশ্য এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও কারসাজীর অভিযোগ করেছেন খান আলতাফ হোসেন ভুলু।
গতবারও খান আলতাফ হোসেন ভুলু দলীয় মনোনয়নের জন্য লবিং করেছিলেন। কিন্তু খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাবার গ্রীন সিগনাল পাবার পর নিজেকে গুটিয়ে নেন খান আলতাফ হোসেন ভুলু। কিন্তু শেষতক খোকন সেরনিয়াবাত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেননি। এর পিছনে কারসাজীর বিষয়টি বরিশালে ওপেন সিক্রেট। আর সেই সময়ের কারসাজির ফলে বিরূপ অবস্থায় ফেলেছে আবুল হাসানাত আবুল্লাহকে। বিষয়টি এখন বিবেচিত হচ্ছে, ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো।’ তার সন্তান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ হয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত। এবং বরিশালে পিতা-পুত্রের রাজনৈতিক সাম্রাজ্য পড়েছে চরম ঝুকিতে। একাধিক সূত্র বলছে, এই সংকট কাটিয়ে ওঠাগেলেও ‘পুরনো সাম্রাজ্য’ পুরো ফিরে পাওয়া অনিশ্চিত।