আলম রায়হান:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ৭ জন। এর মধ্যে ভোটারদের আলোচনায় আছেন চারজন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন। চলমান নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ১২ জুন।
আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনরিয়াবাত প্রার্থী হিসেবে একবারে ক্লিন ইমেজের। সবচেয়ে বড় কথা, চলনে-বলনে এবং আচার-আচরণে তিনি নিরেট ভদ্রলোক। একেবারে সাধাসিধে মানুষ। কিন্তু দৃঢ়চেতা। তার প্রসঙ্গে এক কথায় বলা চলে, র্ফামর্ এন্ড পোলাইট। সবচেয়ে বড়কথা, অনেকের বিবেচনায় তিনি পিতা আবদুর রব সেরনিয়াবাতের প্রতিচ্ছবি। তবে তবে তিনি নগরীতে নতুন মুখ। অন্তত নিন্দুকরা এটিকে প্রচারণার ইস্যু করেছে। এ ছাড়া তাঁর মুভমেন্ট ততটা নয় যতটা হওয়া প্রয়োজন। তবে অনেকের বিবেচনায় এ ঘাটতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে গেছে তার স্ত্রীর কল্যানে। কিন্তু এরপরও রয়েগেছে মূল সমস্যা।
পরিসংখ্যান অনুসারে বরিশাল সিটিতে ৭৫ শতাংশ ভোট আওয়ামী বিরোধী। আওয়ামী লীগের ভোট মাত্র ২৫ শতাংশ। যে কারণে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচন বিবেচনার বাইরে রাখলে দেখা যাবে কেবল ২০০৮ সালের নগরীতে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শওকত হোসের হিরণ মাত্র ৫শ’ ৮৪ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগে নবাগত ও বহিরাগত নেতা।
শওকত হোসেন হিরন ছাত্র জীবনে ছাত্র দল ও জেনারেল এরশাদের সময় জাতীয় পার্টি করেছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন দ্বিতীয় দফায়। জাতীয় পার্টির মরনদশায় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত ধরে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। এর পর শুরু হয় রাজনীতিতে তার টার্নিং অধ্যায়। বরিশাল শহর ও রাজনীতিতে তিনি হয়ে ওঠেন বিশেষ প্রভাবশালী। আর এই প্রভাব বিস্তারের কৌশলের মধ্যে একটি ছিলো ‘হাসানাত বিরোধীতা।’ এবং এই বিরোধীতাকে পুঁজি করে তিনি ২০০৮ সালে বরিশালের মেয়র হয়েছিলেন। সেবার তিনি পেয়েছিলেন ২৪ শতাংশ ভোট। সিটিং মেয়র হিসেবে পরের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের প্রোপ্ত ভোট ২৪ থেকে বেড়ে ৩১ শতাংশে দাড়ায়। এরপরও তিনি প্রায় ১৬ হাজার ভোটের বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের সঙ্গে। উল্লেখ্য, মেয়র হিসেবে এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শওকত হোসেন হিরনের জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা এখনও কেউ র্স্পষ করতে পারেননি, অতিক্রম করা তো অনেক দূরের বিষয়। এরপরও শওকত হোসের হিরণ বরিশালে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে।
সেই নৌকা প্রতীক নিয়ে এবারের চলমান নির্বাচনী মাঠে আছেন আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনরিয়াবাত। আসম এই যুদ্ধে তার সঙ্গে যারা আছেন তারা শহরের রাজনীতি ও সামাজিক কাঠামোতে তেমন প্রভাবশালী কেউ নন। আবার এদের মধ্যে যারা বেশি সক্রিয় তারা হয় হিরনপন্থী না হয় সাদিক বিরোধী হিসেবে খ্যাত। এদিকে খোকন সেরনরিয়াবাতের পক্ষে জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ কতটা আঁদাজল খেয়ে নেমেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে সচেতন মহলে।
সমস্যা আরো আছে। সিটি নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে সাদিকভক্ত হিসেবে পরিচিত অন্তত ৩০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। তারা নিজেদের প্রচারনার বাইরে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কতটা কাজ করছেন তা নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। বরং এমন খবরও আছে, সাদিকের ছয় খলিফার এক খলিফা এক কর্মীকে স্পষ্ট বলেছেন, ‘হয় আমার না হয় নৌকার পক্ষে কাজ করবা; একত্রে দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা যাবে না।’ জানামতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অবস্থা বিরাজমান।
এদিকে আর একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১৩৩টি সেন্টার কমিটি আছে। যা বছরখানেক আগে গঠন করেছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এই সেন্টার কমিটি কার পক্ষেত্রে সেন্টারে কাজ করবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।