Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর মাথায় মর্টার শেল নিয়ে ৫০ বছর বেঁচে আছেন তিনি!

মাথায় মর্টার শেল নিয়ে ৫০ বছর বেঁচে আছেন তিনি!

দখিনের সময় ডেক্স ॥

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে আহত হন নূরজাহান বেগম (৭০) নামের এক নারী ও তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মো. নুরু মিয়া। সে সময় তিনি ও তাঁর স্বামী কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান। কিন্তু নূরজাহানের মস্তিষ্কের ভেতরে রয়ে যায় মর্টার শেলের একটি টুকরো। সেই টুকরো নিয়ে তিনি ৫০ বছর ধরে বেঁচে আছেন, এখনো। বর্তমানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে নূরজাহানের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, মস্তিষ্কে মর্টার শেলের একটি টুকরো রয়ে যাওয়ায় সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাঁর এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তাঁকে ভালো চিকিৎসা করাতে সহযোগিতা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন কুলাউড়ার বাসিন্দা ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মন ও স্নায়ুরোগ চিকিৎসক (সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ ) ডা. সাঈদ এনাম।

গত ২২ এপ্রিল বিকেলে কুলাউড়ার টিলাগাঁওয়ের লংলা খাস এলাকায় ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নূরজাহান বসতঘরের বারান্দায় একটি চেয়ারে বসে আছেন। এ সময় পরিবারের স্বজনদের দিকে তিনি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। তবে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন না। নূরজাহানের মূল বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আমোদাবাদ এলাকায়। বর্তমানে তাঁদের পরিবার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের লংলা খাসের নতুন বস্তি এলাকায় বসবাস করছে।

জানা যায়, দেশমাতৃকার টানে নূরজাহানের স্বামী নুরু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। বাড়িতে ছিলেন স্ত্রী নূরজাহান বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্তঘেঁষা আমোদাবাদ এলাকায় হামলা চালায়। এ সময় মর্টার শেলের আঘাতে

নূরজাহানের পিতা আনছার আলী, ছোট ভাই নূর ইসলাম (১২), বোন জাহেরা খাতুন (১৬) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ছাড়া মর্টার শেলের আঘাতে নূরজাহানসহ তাঁর মাতা ফুলজান বেগম গুরুতর আহত হন। নূরজাহানের মস্তিষ্ক, বাম হাত ও বাম পায়ের উরুতে মর্টার শেলের আঘাত লাগে। আর তাঁর মাতা ফুলজানের পেটের ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। এ সময় নূরজাহনের বড় ভাই মো. রশিদ মিয়া (৭৫) মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির বাক্স এগিয়ে দিতে গেলে শেলের আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।

নূরজাহানের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মো. নুরু মিয়া ২০১৯ সালের ২ জুন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তাঁর পরিবারে ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে সন্তান রয়েছেন। তাঁর দুই ছেলে মোবারক হোসেন ও জালাল হোসেন সৌদিপ্রবাসী। দুজনই বর্তমানে দেশে ছুটি কাটাতে এসেছেন। ৫ মেয়ে সন্তানদের মধ্যে মমতা বেগম, আমেনা বগেম, আনোয়ারা বেগম, সখিনা বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় মেয়ে আলেয়া বেগম মারা গেছেন।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, উনার সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলব। উনাকে সহযোগিতার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে উনার চিকিৎসার বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করলে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

Recent Comments