Home নির্বাচিত খবর ফাঁসিতে এ মৃত্যু রোমান্টিক: জাহাঙ্গীর

ফাঁসিতে এ মৃত্যু রোমান্টিক: জাহাঙ্গীর

দখিনের সময় ডেস্ক:
পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখা করার মধ্যে দিয়ে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় কার্যকরের কার্যক্রম শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার অপেক্ষায় জাহাঙ্গীর স্বাভাবিক ছিল।
আজ রাতেই আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে। দুপুরে কারাগারের ভেতরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, ডিআইজি প্রিজন ও কারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সভা হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়। এদিকে জাহাঙ্গীর  বলেছে,  এ মৃত্যু নিয়ে আমার ভয় নেই। আমার এ মৃত্যু রোমান্টিক। এ মৃত্যু আমার জন্য পরকালে ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে। আপনার আমার জন্য দোয়া করবেন। কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি স্থগিতের আবেদন খারিজের পর পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান আজ মঙ্গলবার(২৫ জুলাই) বেলা ১টার দিকে বলেন, গত রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করি নাই। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর আজ আমরা দেখা করতে এসেছি। আমাদের পরিবারের প্রায় ৩৫ জন সদস্য দেখা করতে এসেছে।
আজ দুপুর ১টার ৬ মিনিটে জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের সদস্যরা ফটক দিয়ে কারাগারের ভিতরে প্রবেশ করেন। ৩টা ৪৫ মিনিটে তারা কারাগারের পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে যান। ফটকের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় দেখে কারা কর্তৃপক্ষে তাদের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেয়। এর আগে সকালে মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবারের দুই-তিনজন সদস্য একটি মাইক্রোবাসে এসে দেখা করে চলে যায় বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, এ দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের আগের সব ধাপ শেষ হয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। আজ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
গত ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজার রুকুর হাই কোর্ট বেঞ্চ। তার তিন দিন পর আপিলের আবেদনটি করা হয়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির একজন হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম, যিনি তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন। অন্য আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তাহেরের সহকর্মী এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে অধ্যাপক তাহের নিখোঁজ হন। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর তার দেখাশোনা করতেন। পরদিন বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেন। বালিশ চাপা দিয়ে খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেন। দণ্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম। তবে ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি বিচারে খালাস পান। পরে দণ্ডিতরা হাই কোর্টে আপিল করেন। হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

Recent Comments