Home শীর্ষ খবর মা যেন দুঃখ ভোগ করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন

মা যেন দুঃখ ভোগ করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন

মা’র স্মৃতি সম্পর্কে প্রশ্ন করার সাথে সাথে শেখ রেহানার চোখে শোকের প্রগাঢ় ছায়া নেমে আসে। ছলছল হয়ে ওঠে দু চোখ। দু-তিন মিনিট কোনো কথা বলতে পারেননি। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, “মা যেন সারাজীবন দুঃখ ভোগ করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন ধীরস্থির ও খুব শান্ত প্রকৃতির। তাঁর মতো আর কাউকে দেখি না।

ছোটবেলায় মা-বাবা হারিয়ে মা স্বাভাবিক কারণেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। বুদ্ধি হওয়ার পর দেখেছি স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় বাবা ছিলেন জেলে। মাকেই সবকিছু সামলাতে হয়েছে। সংসার, আমাদের লেখাপড়া থেকে দল ঠিক রাখা পর্যন্ত- সবকিছুই মাকে করতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তাঁকে অধৈর্য হতে দেখিনি। তখন পলিটিকসের কিছুই বুঝি না। হাসিনা আপাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পাকিস্তান আমলে কর্তৃপক্ষ রাজি ছিল না। ওদিকে বড় ভাইকে (শেখ কামাল) ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে দেওয়া হচ্ছিল না। এ ব্যাপারে নাকি গভর্নর মোনায়েম খানের কড়া নিষেধ ছিল। এসব ঝামেলা মাকেই মোকাবিলা করতে হয়েছে।”

১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ নেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃত করা যাক: “মা কখনোই আব্বার রাজনীতি করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। মা না চাইলে বাবার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব হতো কি না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। শত ঝামেলা এবং দুঃখ-কষ্ট সত্ত্বেও মা সব সময় রাজনীতিতে বাবাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে মা’র ইতিবাচক সমর্থন ছিল। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় অনেকেই বাবাকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু মা বিরোধিতা করেছেন প্রচ-ভাবে। মাকে আব্বার কাছাকাছি যেতে দেওয়া হয়নি। মা চিৎকার করে আব্বাকে বলেছিলেন, তুমি প্যারোলে যাবে না; গেলে বাঙালিদের সাথে বেঈমানী করা হবে। মা’র সম্পর্কে কেউ জানে না, লেখে না। লিখলে অনেক অজানা কথা মানুষ জানতে পারতো।”

দাদা-দাদীর স্মৃতিচারণ বাদে সাক্ষাৎকারের বাকি সময় শেখ রেহানার পুরোটাই জুড়ে ছিল বেদনার প্রকাশ। কথায় কথায় শেখ রেহানার চোখ আবারও ছলছল করে উঠল। বড় ফোঁটার অশ্রু ঝড়ে পড়ে। এতক্ষণ কথা বলার সময় শিশুকন্যা টিউলিপ বেশ কয়েকবার এসেছে এটাওটা জিজ্ঞেস করতে। শেখ রেহানা একটু আদর করে প্রতিবারই ভিতরে গিয়ে খেলতে বলেছেন মেয়েকে। কিন্তু এবার তিনি মেয়েকে কোলে টেনে নিলেন। অবুঝ শিশুকে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, “মা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন। মা প্রায়ই বলতেন, আমার কিছু ভালো লাগে না; কি যেন একটা ঘটবে। হয়তো এ জন্যই তিনি আমাকে বিদেশে যেতে দিয়েছিলেন। তাই আমাকে আজ এই দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।” শেখ রেহানা আবার মায়ের কথায় ফিরে এলেন, “প্রকৃতপক্ষে পুরো সংসারের বোঝা ছিল মা’র ওপর। আমাদের শাসন করার দায়িত্বও ছিল তাঁর ওপর। কিন্তু তবুও তিনি ছিলেন বন্ধুর মতো। খাবার সময় কতদিন গল্প শুনতে শুনতে হাতের ভাত শুকিয়ে যেত।”

মার স্মৃতিচারণ করতে করতে শেখ রেহানা এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে, তাঁকে আর প্রশ্ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। শোভনও ছিল না। তাই পরিস্থিতি কিছুটা হালকা করার জন্য সন্দ্বীপ চিত্রগ্রাহক ফরিদ বাশার স্বামী-সন্তানসহ শেখ রেহানার কয়েকটি ছবি তোলেন।

# আগামী কাল চর্তুথ পর্ব, “রাসেল ছিল সবার আদরের”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments