একটু পরে নিজে থেকেই শেখ রেহানা স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ নেয়া সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃত করা যাক: “রাসেল ছিল সবার ছোট এবং সবার আদরের। বাকি আমাদের চার ভাই-বোনের দুটি দল ছিল। একদলে হাসিনা আপা আর জামাল ভাই; অন্য দলে আমি আর কামাল ভাই। মেঝ ভাইয়ের (শেখ জামাল) সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল বেশি, ঝগড়াও হতো বেশি।
আমরা ভাই-বোনরা প্রায়ই আড্ডা জমাতাম। কিন্তু কামাল ভাই এসব এড়িয়ে চলতে চাইতেন। আব্বা জেলে থাকার সময় সংসারের কাজকর্ম তাঁকেই করতে হতো। এর ফলে তার মধ্যে এক ধরনের দায়িত্ববোধ এবং কিছুটা গাম্ভীর্য এসেছিল। কিন্তু আমরা মানতে চাইতাম না। কামাল ভাই ছিল সাদাসিদা প্রকৃতির। কিন্তু জামাল ভাই ছিল স্টাইলিস্ট। আমাদের সব ব্যাপারেই কামাল ভাইয়ের একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। আমরা ভাই-বোনেরা একটা দল গড়তে চেয়েছিলাম। হাসিনা আপা ভাল বেহালা বাজাতেন, জামাল ভাই গিটার, কামাল ভাই বাজাতেন সেতার আর আমি গান শিখতাম। কামাল ভাই নাটকও করতেন।”
সাক্ষাৎকারে ভাবীদের ব্যাপারেও স্মৃতিচারণ করেছিলেন শেখ রেহানা: “ভাবীদের মধ্যে জামাল ভাইয়ের বৌ রোজী তো ছিল আমার ফুপাতো বোন, আমার বয়সী। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব ছিল আমাদের। কামাল ভাইয়ের বৌ খুকী ভাবীকে তো আগে থেকেই খুকী আপা ডাকতাম। বিয়ের পরও আপা ডাকতাম। কিন্তু কামাল ভাই চাইতেন না আমি আপা ডাকি; তিনি চাইতেন ভাবী ডাকি। আমি বলতাম, হঠাৎ করে ভাবী ডাকা যাবে না, সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময়তো আর পেলাম না!”
১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ নেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানা আলাদা করে বললেন শেখ রাসেলের বিষয়ে: “ওর কত আর বয়স ছিল, দশ বছর হবে। খোদা কেন যে ওকে পাঠিয়ে ছিল এই দুনিয়ায়। ওর জন্মের সময় বাবা ছিলেন জেলে। অতটুকু শিশুও ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। রাসেল সব সময় খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ওর দাবি-দাওয়া ছিল আব্বার কাছে। আব্বাও ওকে কাছে কাছে রাখতে চাইতেন। মাঝেমধ্যে ওর সাথে আমার বাজত। আমি বলতাম আমি ছোট। ও বলত, তুমি আগে ছোট ছিলা এখন আমি ছোট। আমাদের সঙ্গে ওরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মা ওকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না বলে রাসেলকে যেতে দেওয়া হয়নি।”
# আগামী কাল পঞ্চম র্পব, “আমার লাশ পেলেও চিনতে পারবি না”