দখিনের সময় ডেস্ক:
ব্যাটিংয়েই ম্যাচটা অর্ধেক হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। নাজমুল হাসান শান্তর একক প্রতিরোধে যেই সংগ্রহটা পেয়েছিল টাইগাররা, সেটা দিয়ে লড়াইটা কম করেননি বোলাররা। তবে সাদেরা সামারাবিক্রমা এবং চারিথ আশালঙ্কার নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি সাকিবের দল। আর তাতে হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু হল বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের দেওয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।
এই হারে সুপার ফোরে ওঠার লড়াইটা কঠিন হয়ে গেলো বাংলাদেশের। মূলপর্বে উঠতে নিজেদের শেষ ম্যাচে রোববার (৩১ আগস্ট) আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হবে সাকিবের দলকে। তবে শুধু জিতলেই চলবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে নেট রান রেটের দিকেও। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অভিষেকটা সুখকর হয়নি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হয়েছেন তিনি। নাঈম প্রথম ওভারে একটি চার হাঁকালেও পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই বিদায় নেন তামিম।
তামিম আউট হওয়ার পর ওয়ানডাউনে খেলতে নামেন দেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিম আউট হওয়ার ওভারে তাকেও বিপদে ফেলেন থিকশানা। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা যায়, শান্তর প্যাডে লাগা বলটি পিচ হয়েছিল লেগ সাইডে। এরপর একবার জীবন পান শান্ত, তার ক্যাচ ফেলে দেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। নাঈম শেখের আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটেছিল দাপটের সঙ্গে। ভারতের বিপক্ষে ঝোড়ো ইনিংস খেলে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর আশানুরূপ পারফর্ম করতে না পারায় বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। মাঝে কয়েকটি ম্যাচ খেললেও আবার সবার আড়ালে চলে যান। এশিয়া কাপ দিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট আবার তাকে দলে ফিরিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
একের পর এক ডট দিয়ে যখন বাংলাদেশ বিপদে, তখন বিদায় নেন নাঈম শেখ। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলের লাইন-লেন্থ না বুঝে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ২৩ বলে মাত্র ১৬ রান করেন এ ওপেনার। তার বিদায় নেয়ার কিছুক্ষণ পর সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। ১১ বলে সাকিব করেন ৫ রান।
এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও অন্যপ্রান্তে একাই লড়ছিলেন শান্ত। চতুর্থ উইকেটে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে গড়েন ৫৯ রানের জুটি। তুলে নেন নিজের ফিফটিও। ৪১ বলে ২০ রান করে হৃদয় ফিরলে দ্রুত সময়ের ব্যবধানে ফেরেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর মিরাজকে নিয়ে ধীরগতিতে এগোচ্ছিলেন শান্ত। কিন্তু দলীয় ১৪১ রানের মাথায় দুই ব্যাটারের ভুল বোঝাবুঝিতে ফিরতে হয় মিরাজকে। উইকেটের মিছিলের বিপরীতে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন শান্ত। সম্ভাবনা ছিল সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার। তবে আক্ষেপ নিয়েই শেষমেশ ফিরতে হয় এই ব্যাটারকে। ৭ চারে ১২২ বলে ৮৯ রান করে ফেরেন শান্ত। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে কাজে লাগাতে পারেননি শেখ মেহেদী। ওয়েল্লালাগের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। বাংলাদেশের শেষ ৩ উইকেট পড়েছে ৮ বলের ব্যবধানে। ৪৪ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয় টাইগাররা।
ছোট লক্ষ্যতাড়ায় ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে অবশ্য স্বস্তিতে থাকতে দেননি তাসকিন-শরিদুলরা। প্রথম দুই ওভারে ১৩ রান খেয়ে ব্যাকফুটে চলে গেলেও তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে করুনারত্নেকে ফিরিয়ে আশার সঞ্চার করেন তাসকিন। টেস্ট অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ১ রান। লঙ্কানদের চাপটা আরও বাড়ান শরিফুল। ১৪ রান করা পাথুম নিসাঙ্কাকে বোকা বানিয়ে সাজঘরের পথ ধরান তিনি। সাকিবের করা প্রথম ওভারে তাকে বেশ দেখেশুনেই খেলেছিল লঙ্কানরা। দ্বিতীয় ওভারে আর সেই সুযোগটা দেননি টাইগার অধিনায়ক। স্ট্রাগল করতে থাকা মেন্ডিসকে আউট করে লঙ্কানদের ওপর চাপ বাড়ান তিনি। চতুর্থ উইকেটে বেশ দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন সামারাবিক্রমা এবং আশালঙ্কা। দুজনের ৭৮ রানের অনবদ্য জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। সামারাবিক্রমা ৫৪ রান করে ফিরলে দ্রুত আরেকটি উইকেট হারায় লঙ্কানরা। তবে চাপ আসতে দেননি আশালঙ্কা। অধিনায়ক শানাকার সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান এই ব্যাটার। ৯২ বলে ৬২ রান করেছেন আশালঙ্কা। শানাকা অপরাজিত ছিলেন ১৪ রানে।