Home শীর্ষ খবর অদম্য জিয়াউর রহমান, দিনমজুর থেকে বিসিএস ক্যাডার

অদম্য জিয়াউর রহমান, দিনমজুর থেকে বিসিএস ক্যাডার

দখিনের সময় ডেস্ক:
বিসিএস জয় করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের বাকারা মধুপুর দালারীপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান। ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তার এ সাফল্যে খুশি পরিবার ও স্বজনরা। অথচ জীবিকার তাগিদে কখনো মাঠে শ্রমিকের কাজ করেছেন জিয়াউর রহমান, কখনোবা দিনমজুরি। ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিও করেছেন। তবে শত কষ্টেও চালিয়ে গেছেন নিজের লেখাপড়া। অবশেষ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জিয়াউর রহমান বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন- এমন খবরে ভিড় লেগেই আছে তার বাড়িতে। প্রতিদিনই তাকে দেখতে আসছেন প্রতিবেশীসহ দূর-দূরান্তের লোকজন। উলিপুরের ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের দালালীপাড়ায় মাত্র ৬ শতাংশ জমির ওপর জরাজীর্ণ বাড়ি জিয়াউর রহমানের। বাবা অসুস্থ থাকায় ছোটবেলা থেকে কাঁধে নিতে হয়েছে সংসারের হাল। জমিতে ধান কাটার কাজসহ যে কোনো শ্রমিকের কাজ করে পাওয়া অর্থে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং ২০১২ সালে মানবিক বিভাগ থেকে দাখিল ও ২০১৪ সালে আলিম পাস করেন তিনি।
পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার আশায় ঢাকায় গিয়ে কারখানায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। এমনকি টাইলস মিস্ত্রির কাজও করতে হয়েছে তাকে। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। পরে ৪১তম বিসিএসে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
উলিপুরের দালালীপাড়া গ্রামের ছকিয়ত আলী ও জেলেখা বেগম দম্পতির ছেলে জিয়াউর রহমান। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। বোনদের বিয়ে হওয়ায় বাবা-মাকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি।  জিয়াউর রহমান বলেন, দাখিল পাস করার পর আলিম পড়ার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। পরে বই কেনার টাকা জোগাড় করতে ঢাকায় যাই। সেখানে একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করি। কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ি ফিরে আসি, কিন্তু বই কেনা হয় না। ছোট বোনের বিয়ের জন্য সব টাকা শেষ হয়ে যায়। চলে যাই মুন্সীগঞ্জে কাজ নেই একটি কারখানায়। সেখানে কিছু দিন কাজ করে পড়াশোনা শুরু করি। পড়াশোনার ফাঁকে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করতে হতো। শেষে ২০১৪ সালে আলিম পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।
জিয়াউর রহমান আরও বলেন, অনেক কষ্ট করে ভর্তি হই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। কিন্তু কীভাবে পড়াশোনার খরচ আসবে তার নিশ্চয়তা ছিল না। থাকা, খাওয়া ও সামান্য কিছু হাত খরচের টাকার জন্য খণ্ডকালীন কাজ নেই। প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আগে মেসে উঠি। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর বৃত্তি পাই। এ ছাড়া টিউশনি, কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে অনার্স সিজিপিএ ৩.৪১ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। টাকার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও বাড়িতে এসে অনেকবার দিনমজুরির কাজ করেছি স্থানীয়দের সঙ্গে। তারপরও বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় ও  টাইলস মিস্ত্রির কাজ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিই। অবশেষে কপালে জুঠে যায় শিক্ষা ক্যাডার। বিসিএসের রেজাল্ট যেদিন প্রকাশ হয় সেদিন শিক্ষা ক্যাডারে নিজের রোল দেখে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে

দখিনের সময় ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ভোট গণনায় জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) দলের নেতা ও ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের প্রার্থী অনুড়া দিশনায়েকে...

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম গ্রেপ্তার

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বরিশাল- ৫ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর...

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৯২৬

দখিনের সময় ডেস্ক: বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনাও।গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৬...

বরিশালে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ!

দখিনের সময় ডেস্ক: বরিশাল নগরীর ৬ নং ওয়ার্ড গগন গলি এলাকায় ইসমাইল শিকদারের ছেলে সোহাগ মাহমুদ সিকদার ও তার ছোট ভাই প্রিন্স মাহমুদ সোহেল কে নির্মমভাবে কুপিয়ে...

Recent Comments