Home মতামত কুকুর নিধনের সনাতনী ধারায় সাংবাদিক নিধনের চেতনা

কুকুর নিধনের সনাতনী ধারায় সাংবাদিক নিধনের চেতনা

আমাদের দেশের বলতেগেলে এই সেদিন আইনসিদ্ধভাবে কুকুর নিধনের মতোই ১৫৭৪ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের রাজকুমারদের হত্যা করার ধারা অব্যাহত ছিলো। ইতিহাস বলে, অটোমান সাম্রাজ্যে নতুন সুলতান সিংহাসনে বসার পর ভাই হত্যার বিধান বিলুপ্ত করার পর থেকে অটোমান সাম্রাজ্যে বিশৃংখলার সূচনা হয়।
সাম্রাজ্যের শক্তিশালী কেন্দ্রগুলো সুলতানের উপর অসন্তুষ্ট হলে অন্য যুবরাজকে সুলতান হিসাবে বসানোর চেষ্টা করতেন। শুধু তাই নয়, সুলতানের কোন ভাই বেঁচে থাকলে সুলতানের ওপর সেনাবাহিনীর নানারকম দাবির চাপ থাকতো। এবং সুলতান তাদের কথা না শুনলে সেনারা বলতেন, ‘মহান খোদা আপনার ভাইকে আশীর্বাদ করুন।’ অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে তার স্থলে তার ভাইকে সিংহাসনে বসাতে পারেন। এ ভাবেই সেনাবাহিনী সুলতানের প্রতি অসন্তোষ এবং ওপর ভাইয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার সুযোগ পেতো।
অটোমান সাম্রাজ্যে ভাই হত্যার রেওয়াজ বন্ধ হওয়ার পর এক পর্যায়ে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ। যা চলেছে একটানা ২০ বছর। এতে সাম্রাজ্যের ভিত ফোকলা হয়ে যায়। উইপোকার কবলে পড়া কাঠের মতো। অটোমান সাম্রাজ্য চলে যায় ধ্বংসের দিকে। এর ধারাবাহিকতায় এ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে প্রথম বিশ্বিযুদ্ধে। দেশটিতে জেকে বসে নানান বিদেশী শক্তির উপদ্রব।
এদিকে আমাদের দেশে কুকুর নিধন বিধান রহিত হবার পর সায়মেয় দলের উপদ্রব কী পরিমান বেড়েছে তা কমবেশী সকলেরই জানা। শহরের অলিতেগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক কুকুরের দল দাপিয়ে বেড়ায়। কিন্তু মানবকুলের কিছুই করার নেই। কুকুর দলের বিপক্ষে যাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা। আবার কারো মতে, দ্বিপদী কুকুরের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। যেনো বানের জল।
হয়তো, অটোমান সাম্রাজ্যে যুবরাজ এবং আমাদের দেশে কুকুর নিধনের সনাতনী চেতনায় উদ্ভূদ্ধ হয়েই সারা দেশে সাংবাদিক নিধনের ধারা চলে আসছে। যার সাম্প্রতিক অন্যরকম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ। দুইজন সহযোগী অধ্যাপকের নেতৃত্বে একদল সাংবাদিককে পেদিয়ে বৃন্দাবনে পাঠানো ব্যবস্থা করেছে। আর একটু সময় পেলে অথবা আক্রান্ত মেষরাশির সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে সিংহ রাশির হয়ে প্রতিবাদী হলে তাদেরকে হয়তো স্বর্গ অথবা নরকের টিকিট ধরিয়ে দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারতো। কিন্তু ঘটনা প্রবাহ সে পর্যন্ত যায়নি। সাংবাদিকরা পেশার নিয়মনীতির আওতায় থেকেছেন। পাল্টা মাস্তান হননি।
এদিকে রহস্যজনক কারণে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে মানিয়ে চলার মানসিকতা দেখানো হয়েছে। যেমন আরো অনেক কিছু মানিয়ে নেবার অনুশীলন চলছে। ফলে কে কোথায় কখন সাংবাদিক পিটিয়েছে অথবা হত্যা করেছে তা নিয়ে হয়তো কোন প্রতিক্রিয়া বা প্রতিকার প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। তবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে সাংবাদিকদের উপর হামলা এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই কবরের নীরবতার অন্যরকম বাস্তবতা নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সারাদেশে যা ঘটছে তাকে হয়তো সাংবাদিকদেরকে অটোমান সাম্রাজ্যের যুবরাজ হত্যা অথবা রাস্তার রেওয়ারিশ কুকুরের পর্যায়ে নিয়ে যাবার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এক বা একাধিক কেন্দ্র থেকে। হতে পারে, এই প্রকল্পের আওতায়ই মাঠ পর্যায়ে একদল মানুষের উপদ্রব চলছে যারা মোটেই সাংবাদিক নন। এবং চাইলেও তাদেরকে সাংবাদিক বানানোর উপায় নেই। উল্লুক তো ঘোড়া হবার নয়। আবার যারা সাংবাদিক নেতা হিসেবে আসীন তাঁদের অনেকেই রাজনীতির প্রকাশ্য লেজুর অথবা নানান ধরনের ব্যবসায়ী। আর জানা কথা, অনেক মালিক গণমাধ্যমকে নানান অপকর্মের ঢাল এবং প্রাপ্তির সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন।

শফি আহমেদের ফেসবুক পোস্টে আবদুল মুকিত লাভলুর মন্তব্য

সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমের কন্ঠ প্রতিনিয়ত ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে, হারাচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা। এ প্রসঙ্গে এরাশাদ বিরোধী গণ-আন্দোলনের ছাত্র নেতা শফি আহমেদের পোস্টে একই সময়ের আরএক ছাত্রনেতা এবং পরে ব্যাংকার ফারুক হাসান মন্তব্য করেছেন, “বোঝাই যাচ্ছে, সাংবাদিকদের প্রতি / সাংবাদিক সমাজের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী খুবই নিস্পৃহ, বিরক্তিকর এবং বেশখানিকটা শত্রু ভাবাপন্নও বটে। এজন্য সাংবাদিকদের অনৈতিক পেশাদারি আচরণই দায়ী বলে অনেকেই মনে করে, বিশ্বাস করে।”
একই পোস্টে মন্তব্য করেছেন আবদুল মুকিত লাভলু। এইসব মন্তব্যে সাংবাদিক হিসেবে আমিসহ অনেকেই লজ্জিত হলেও মানতেই হবে, এ এক নির্মম বাস্তবতা! এর সঙ্গে আর একটি বিষয় যোগ করা যায়। তা হচ্ছে, এই পরিস্থিতি নানান শক্তিকেন্দ্র থেকে সুকৌশলে তৈরী করা হয়েছে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার এই ভয়াবহ দুর্যোগে নিশ্চয়ই অন্ধকারের শক্তি কেন্দ্রগুলো বগল বাজাচ্ছে। কবে বলে রাখা ভালো, সাংবাদিক নিধন, ভিতর থেকে পচিয়ে দেয়া এবং গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করার ধারা আখেড়ে মোটেই সুফল বয়ে আনবে না। বরং চলমান ধারা চলতে থাকলে পরিণতি সকল পক্ষের জন্য ভয়াবহ হতে বাধ্য। তখন হয়তো আর সামলানো যাবে না!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# কালবেলায় প্রকাশ ৩ সেপ্টমার ২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments