অনেকেই না জানলেও কেউ কেউ জানেন, দক্ষিণ অঞ্চলের সেচ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ায় কৃষি উৎপাদন কমে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিলম্বে হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম কিঞ্চিত ভেঙেছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের। একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, ‘বরিশাল সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (প্রথম পর্ব) নামে এ প্রকল্পটি বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল সেচ প্রকল্প (বিআইপি)-এর অন্তত ২১টি পাম্প হাউস মেরামতের মাধ্যমে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
‘বরিশাল সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (প্রথম পর্ব) প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের বিশেষ নজরদারিতে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে। এ দাবি সত্য হলেও একটি প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়, গোধূলি বেলায় কেন এ যজ্ঞ?
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার আমলে ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বরিশাল সেচ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৮ জুলাই আবদুর রব সেরনিয়াবাত বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা দেশে কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। আর বিশেষভাবে উপকৃত হয় বরিশালের ৬ জেলা। তখন ছিল এক জেলা। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত দক্ষিণ অঞ্চলে ইরি চাষের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে ৭৪ সালে ‘ষড়যন্ত্রের দুর্ভিক্ষের’ তীব্রতা এ অঞ্চলে তুলনামূলক কম ছিল। এদিকে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ও ডিজাইনে এ প্রকল্প নিয়েও অন্যরকম ত্রুটির অভিযোগ আছে।
বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা প্রণয়নের বেলায় বরিশালের পানির উৎস ও প্রবণতা সঠিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। ফলে বরিশালের জন্য গলার কাঁটা হয়ে গেছে বিআইপি এবং দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের অনেক এলাকায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এবং খরস্রোতা চওড়া খালে নির্মিত ছোট সাইজের স্লুইস গেটগুলো পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি দ্রুতই ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এর আগে শত বছর বিরাজমান খালগুলোর সর্বনাশ করে দেয়। এ স্লুইস গেটগুলো এখন অনেক স্থানে কংক্রিট ও লোহার কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যার কোনো উপযোগ নেই। এ প্রকল্পে অন্যরকম ত্রুটিও ছিল। এর ডিজাইন করা ছিল পানি ডাবল লিফটিং ব্যবস্থার। মানে নদী থেকে পানি তুলে খাল ভরাট করা হবে এবং খাল থেকে জমিতে সেচ দেবে কৃষক। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে সেই সময় খালে পানি রাখার জন্য নদী থেকে তোলার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এখনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল কয়েক বছর পরপর খাল ও নদী খনন।
আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক (বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ১৯ অক্টোবর ২০২৩))