আলম রায়হান:
কিছুকিছু মানুষ আছেন যারা নীরবে থাকেন। আবার চলেও যান নীরবে। আমার জানামতে এদের একজন সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) ভোর রাতে অজানা গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। অনেকের মতো এ সংবাদ আমাকেও খুবই ব্যাথিত করেছে। অথচ আমি তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ ছিলাম না, তাঁর দ্বারা উপকৃত বা ক্ষতিগ্রস্থ নই। এমনকি তাঁর সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছে, তাও কিন্তু নয়। মাত্র একবার দেখা হয়েছে। আধা ঘন্টার মতো একত্রে ছিলাম। তখন মন্ত্রীপরিষদ সচিবের একান্ত সচিব কাজী শাজাহানের ছোট রুমটিতে ছিলেন আরো কয়েকজন। তখন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন তাঁর কক্ষে ছিলেন না।
পেশাগত কারণে এখানে ওখানে যাবার প্রবনতা এখনোও ত্যাগ করতে পারিনি। এ কারলে মাঝেমধ্যে মন্ত্রীপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেনের কাছেও যাই। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ও পেশাগত কারণেই। মহিউদ্দির খান আলমগীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব থাকাকালে মো: মাহবুব হোসেন ছিলেন তাঁর একান্ত সচিব। তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয় এবং অব্যাহত যোগাযোগ। মাস কয়েক আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। বসলাম একান্ত সচিবের রুমে। তাঁর রুমে অভ্যাগতদের বসার জন্য ডাবল সিটের তিনটি সোফা আছে। মানে ছয় জনের বসার ব্যবস্থা। আমি যখন ঢুকি তখন মাত্র একটি সিট খালি ছিলো। তাও আবার সৈয়দ আবুল হোসেনের পাশে। আমি ইতস্থত করছিলেন বসবো কীনা, নাকী পাশের রুমে বসব। একসময় আবুল হোসের বললেন, বসেন। হয়তো তিনি আমার ইতস্থতা লক্ষ্য করেছিলেন। অথচ তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিলো না। আর সাইজ-আকৃতি-পোশাক-আশাকে আমাকে বিশিষ্ট কোন ব্যক্তি মনে করার কোন কারণ ছিলো না, নেইও।
আমি রুমে প্রবেশ করার আগে তিনি অন্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন। পরিচয় পর্বে আমার বাড়ি বরিশাল জেনে তাঁর আলোচনার ধারা বদলে গেলো। তিনি বললেন, তাঁর ব্যবসায়ী হবার পিছনে বরিশালের অবদান আছে। তিনি জানালেন, তাঁর মা তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার অনুকম্পায়ই তার ব্যবসার সূচনা এবং সাফল্য। এ সময় আবদুর রব সেরনিয়াবাত প্রসঙ্গে পরম শ্রদ্ধায় অনেক কথা বললেন তা হয়তো অনেকেই জানেন না। সৈয়দ আবুল হোসেন সবচেয়ে তৃপ্তির প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা জানালেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা অসংখ্য ছাত্র জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার বিষয়টি ছিলো সম্ভবত তাঁর সবেচেয়ে বড় তৃপ্তির বিষয়।
উল্লেখ্য, সৈয়দ আবুল হোসেন বিসিএস (ফরেন সার্ভিস)-এ চাকুরী পেয়েছিলেন । কিন্তু যোগদান করেননি। রাজনীতি ছিলো তার লক্ষ্য। এ জন্যই তিনি ব্যবসার পথে হেটেছেন। যে কারণে রাজনীতিতে দিতে পেরেছেন। যদিও পরে আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাবসা থেকে যারা রাজনীতিতে এসেছেন তাঁদের আনেকেই নেবার প্রবনতায় আক্রান্ত। এদের অনেকেই যেনো রক্তচোষা!