দখিনের সময় ডেস্ক:
রাজশাহী বোয়ালিয়ায় জোর করে দেহব্যবসা করানোর অভিযোগে চারজন হোটেল মালিক ও একজন ম্যানেজারকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আসামিদের আগাম জামিন না দিয়ে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আসামিরা হলেন, রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. রিটু (৪৫), হোটেল মালিক রাজশাহীর বোয়ালিয়ার হেতেমখাঁ গ্রামের মো. আবুল কালাম আজাদ (৩৫), চন্দ্রিমা থানার মো. শফিকুল ইসলাম (৩৫), বাগমাড়া থানার দেওপাড়া গ্রামের মো. আফজাল হোসেন (৪১) ও পবা থানার নওহাটা গ্রামের মো. ইসরাফিল (৪৫)। হোটেল মালিকদের উদ্দেশে আদালত বলেন, অবৈধভাবে বেশি টাকা উপার্জনের আশায় জোর করে হোটেলে দেহব্যবসার সুযোগ দিচ্ছেন। জোর করে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করানো জঘন্য অপরাধ। এই আসামিদের জামিন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রথমে আসামিদের সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে পাঁচ আসামিকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়। আদালতে আসামিদের জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মাসুদ পারভেজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী। আইনজীবী মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, পাঁচজন আগাম জামিন নিতে এসেছিলেন। হাইকোর্ট তাদের জামিন না দিয়ে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। পরে তাদের সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে বোয়ালিয়া পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
গত ১৭ অক্টোবর রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) ডিবি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৭,৮, ১২ ও ১৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে আটকে রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজের প্রস্তাব, প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখানোর মতো অপরাধের বর্ণনা আছে এসব ধারায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রধান আসামি মো. নাইমুল ইসলাম নাঈম (১৯) ফোন করে পূর্ব পরিচিত ভুক্তভোগীকে বোয়ালিয়া থানার সাহেব ভুবনমোহন পার্কে আসতে বলে। গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে ওই পার্কে গেলে ভুক্তভোগীকে পার্কের পার্শ্ববর্তী এলাকা সাহেব বাজার গণকপাড়ার পদ্মা আবাসিক হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে নাঈম যৌন সম্পর্ক করতে চাইলে ভুক্তভোগী আপত্তি করে। সম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে নাঈম ভুক্তভোগীকে ওই কক্ষে আটকে রাখে। আটকে থাকার এক পর্যায়ে নাঈম বাথরুমে গেলে সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে পোলিয়ে আসেন ভুক্তভোগী। হেতেমখাঁ মোড় হয়ে বাড়ি ফেরার সময় ডিবি পুলিশকে দেখতে পেয়ে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন ভুক্তভোগী।
মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ডিবি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ভুক্তভোগীর কাছে পুরো ঘটনা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ফোর্সসহ ওই হোটেলে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে প্রধান আসামি মো. নাইমুল ইসলাম নাঈম, পদ্মা আবাসিক হোটেলের স্টাফ মো. সোহাগ (৩১), মো. আবুল কালাম (৫৫), মো. শাপলা (২৮), মো. আঞ্জুমান (৩৫), মো. শিরিন আকতার (২২), মো. মাসুদা আক্তার (২০) ও মো. রোকসানাকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া পালিয়ে যায় হোটেলটির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মো. রিটু, হোটেল মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. আফজাল হোসেন ও মো. ইসরাফিল। এরপর তারা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।