Home শীর্ষ খবর ‘বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকত না’

‘বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকত না’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উচ্ছেদ করার পাশাপাশি বাকশাল ব্যবস্থার অবসান ঘটানো হয়। এরপর লাগাতারভাবে নানা ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করার পাশাপাশি বাকশাল ব্যবস্থা অচ্ছুত ও দানবীয় বিধান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রমাগত অপপ্রচারে। এ অপপ্রচারের বর্ম ভেদ করে বঙ্গবন্ধুকে সমহিমায় ফিরিয়ে আনা হলেও বাকশাল আর শুদ্ধ ইমেজ পায়নি। হয়তো বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধারক এবং বেনিফিশিয়ারিরাও বাকশালের প্রত্যাবর্তন চাননি। অথবা বিশ্ব বাস্তবতা এতটাই বৈরী ছিল যে, সমাজতান্ত্রিক ধারার বাকশাল ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। ফলে এটি এক ধরনের ‘অপ শব্দের’ তকমা ধারণ করেই রয়ে গেল। কিন্তু সংকটে যে বাকশাল ব্যবস্থার উপযোগ অনিবার্য, তা এবার সংসদ নির্বাচনে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
স্মরণ করা যেতে পারে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু এমন একটি পদ্ধতি এনেছিলেন, যেখানে কেউ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যে যে প্রার্থী হবে, সবার নাম একটি পোস্টারে দিয়ে প্রচার করার বিধান ছিল। যে ব্যক্তি যত বেশি জনগণের কাছে যেতে পারবে, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে, সেই শুধু নির্বাচিত হবে। এ পদ্ধতিতে দুটি নির্বাচন হয়। একটি হয়েছিল কিশোরগঞ্জে, সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই জনগণের ভোটে একজন স্কুলমাস্টারের কাছে হেরেছেন। আর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় পটুয়াখালীতে।
যদিও আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখে বাকশালের বিষয়ে ইতিবাচক কথা শোনা যায় না। গুণকীর্তন তো একবারেই না। তবে ইতিবাচক কথা একাধিকবার বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকত না।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্কই থাকত না। বাকশাল ছিল সর্বোত্তম পন্থা। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা (বাকশাল) করে গিয়েছিলেন, সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব (নির্বাচনী অস্বচ্ছতা) প্রশ্ন আর উঠত না। আর বঙ্গবন্ধু চাইলেন, মানুষ যেন তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। যে অধিকার তিনি দিয়েছিলেন ৭২-এর সংবিধানে। বাকশাল বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ছিল দাবি করে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য যে কতটা উপযোগী ছিল, একসময় বাংলাদেশের মানুষ তা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা করে গিয়েছিলেন, সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব প্রশ্ন (নির্বাচনে অস্বচ্ছতা) আর আসত না। সব থেকে জনদরদি যে ব্যক্তিটি জনসেবা করে, সেই নির্বাচিত হয়ে আসতে পারত।
বঙ্গবন্ধুকন্যা আসলে বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন। আর বাকশাল মোটেই একদলীয় শাসন ছিল না। এটি ছিল বহু দলের একটি মোর্চা, যা বহু পথ ও মতকে ধারণ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। আর এর নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল আমাদের অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে আধুনিক ও উপযোগী। যার যার মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিধান ছিল। জনগণের সুযোগ ছিল নিজের মতো করে নেতা নির্বাচিত করা। এ ক্ষেত্রে জনগণই ছিল মুখ্য। প্রার্থী মনোনয়নের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে মনোনয়ন-বাণিজ্য অথবা এরকমের অন্য কোনো কালো অধ্যায় ছায়া ফেলতে পারত না। পরীক্ষার আগেই এ বিধান মুছে ফেলা হলো। কিন্তু বাকশালী বিধান ফিরে না এলেও এবারের নির্বাচনে বাকশালী থেরাপির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধারায়, ঘটা করে নৌকার মনোনয়ন ঘোষণা করা হলেও দলের অন্য নেতাদের পথ রুদ্ধ করা হয়নি। বরং গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে এই দলেরই নেতাকর্মীর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা নেই। বরং নানানভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানলেই নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আর থাকল না। বরং আওয়ামী লীগ করেন এমন যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়া। এদিকে একই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী আছেন। আছেন অন্যান্য দলের এবং নির্দলীয় প্রার্থীও। ফলে ভোটারদের ভোটদানের অপশনে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। থাকল না কোনো প্রবাসী ব্যক্তিবিশেষের একগুঁয়েমিতে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে জিম্মি করার সুযোগ। লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩। শিরোনাম, “নির্বাচনে অভিনব থেরাপি”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

Recent Comments