একটি কবিতার জন্য প্রায় পাঁচ দশক ধরে নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার। তাঁর কবিতার ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- বহুল উচ্চারিত, সমাদৃত। এ কবিতার জন্য কবি প্রথমে ১৩ বছর ভারতে ও ১৯৮৭ থেকে জার্মানিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। ১৯৭৪ সালে যখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষের গ্রাসে বিপর্যস্ত তখন একদল লোক দাউদ হায়দারের কবিতাকে কেন্দ্র করে দেশকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বুলন্দ আওয়াজ দিয়ে মাঠে নেমে পড়ল এবং পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে, বঙ্গবন্ধু সরকার কবিকে প্লেনে তুলে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন।
এর আগে ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ পুলিশ কবিকে গ্রেফতার করে। একই বছর ২১ মে তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ২২ মে কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। ওই ফ্লাইটে কবি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিলেন না। কবির নিরাপত্তায় এবং তাঁকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। একপর্যায়ে ভারত সরকারও নির্বাসিত কবির দায়িত্ব নিতে চায়নি। এদিকে পাসপোর্ট না থাকায় তিনি অন্য কোনো দেশেও যেতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান নোবেলবিজয়ী জার্মান কবি গুন্টার গ্রাস। বন্ধুর সহায়তায় ১৯৮৫-এর কোনো এক প্রভাতে জার্মানির বার্লিনে গিয়ে পৌঁছান দাউদ হায়দার। সেই থেকে তিনি সেখানেই আছেন। তিনি নির্বাসিত কবি এক!
ইতিহাসের পাতা থেকে এ ঘটনা তুলে আনার কারণ মোটেই পত্রিকার পাতা ভরানো নয়। নয় পুরনো কাব্য প্রেম হঠাৎ জাগ্রত হওয়া। আবার এটি মোটেই প্রমাণ করার প্রয়াস নয় যে, ’৭৫-এর থিংকট্যাংক মরিয়া হয়ে উঠেছিল ’৭৪ সালে দেশে সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ চলাকালেই। বলাবাহুল্য, উল্লিখিত কবিতার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকের মতোই আমারও রয়েছে দ্বিমত। এরপরও এ প্রসঙ্গ তোলার কারণ হচ্ছে কবিতার জোরালো বাক্য, ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ…।’ যা বিএনপির সঙ্গে একপ্রকার মিলে যায়। এ কারণেই নির্বাচন বর্জনে দলটির দৃঢ়তার বাড়াবাড়ি স্পষ্ট।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত ২১/১/২৯২৪। শীরোনাম, ‘জন্মকালীন প্রবণতায় বিএনপির বর্জন’