ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ শীর্ষ বৈঠকে নানান বিষেয়ের সঙ্গে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে স্থির হয়, শুষ্ক মৌসুমের গঙ্গার পানি ভাগাভাগির পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আগে ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হবে না। কিন্তু কথা রাখেনি ভারত। আর ক্ষেত্রে বিনয়ী কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। বলা হয় এ ক্ষেত্রে বিনয়ের অবতার হবার চেষ্টা করেছে আমাদের প্রতিবেশী দাদা রাষ্ট্রটি।
ভারত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে জানায়, ফারাক্কা বাঁধের ফিডার ক্যানাল পরীক্ষা করা তাদের প্রয়োজন। সে সময় ভারত ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১০ দিন ফারাক্কা থেকে গঙ্গার প্রবাহ প্রত্যাহার করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অনুমতি ‘প্রার্থনা’ করে। বাংলাদেশ এতে সম্মতি জানায়। এভাবেই ভারত বাঁধ চালু করে দেয় এবং নির্ধারিত সময়ের পরও একতরফাভাবে গঙ্গার গতি পরিবর্তন করতে থাকে। যা ১৯৭৬ সালের পুরো শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
বাংলাদেশ এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হয়। ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি সর্বসম্মত বিবৃতি গৃহীত হয়, যাতে অন্যান্যের মধ্যে ভারতকে সমস্যার একটি ন্যায্য ও দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর জের ধরে কয়েকদফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর দুই দেশ ফারাক্কায় প্রাপ্ত শুষ্ক মৌসুমের পানি বণ্টনের ওপর ৫ বছর মেয়াদি (১৯৭৮-৮২) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
১৯৮২ সালের অক্টোবর মাসে দুই দেশের মধ্যে ১৯৮৩ ও ’৮৪ সালের জন্য গঙ্গার পানি বণ্টনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কোনো সমঝোতা চুক্তি না থাকায় ১৯৮৫ সালে গঙ্গার পানির ভাগবাঁটোয়ারা হয়নি। ১৯৮৯ সালের পর শুষ্ক মৌসুম থেকে পানি ভাগাভাগিসংক্রান্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা চালু ছিল না। এ সুযোগে ভারত শুষ্ক মৌসুমে একতরফা নদীর পানি ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার শুরু করে। ফলে বাংলাদেশে গঙ্গার পানিপ্রবাহ দারুণভাবে হ্রাস পায়। ১৯৯২ সালের মে মাসে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে বৈঠকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীনভাবে আশ্বাস দেন যে, ফারাক্কায় গঙ্গার পানি সাম্যতার ভিত্তিতে বণ্টনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘অযথা হয়রানি’ থেকে রেহাই দিতে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে দুটি মন্ত্রী পর্যায় ও দুটি সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও বণ্টনসংক্রান্ত কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে আবার বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু বাংলাদেশকে ‘অযথা হয়রানি’ থেকে মুক্তি দেওয়ার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অধরাই থেকে গেছে।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪। শিরোনাম ‘পানি সমস্যায় বাংলাদেশ