আলম রায়হান
বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টনসংক্রান্ত একটি চুক্তিতে উপনীত হয়১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। এই চুক্তিকেই যেন ধরে নেওয়া হয়েছে ‘পানি প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে আলোচনার চূড়ান্ত অর্জন।’ ভাবখানা এই, ম্যাওয়া পাওয়া গেছে। এরপর আর কিছুই করার থাকে না! কিন্তু কারোরই অজানা নয়, শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানির ব্যাপক প্রত্যাহার বাংলাদেশের গঙ্গানির্ভর এলাকার জনগণের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ফারাক্কা বাঁধের ফলে কেবল ভূ-উপরস্থ পানি নয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। পানির গুণগতমানও কমেছে। ফারাক্কা-উত্তর সময়কালে ভূগর্ভস্থ পানির গতিপথ ধীরে ধীরে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে পরিবর্তিত হচ্ছে। গঙ্গা নদী বর্তমানে বছরের অধিক সময় ধরে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কাল পর্যন্ত আশপাশের ভূগর্ভস্থ পানি স্তর থেকে পানি সংগ্রহ করছে আর ভূগর্ভস্থ পানি স্তরে আনুভূমিক পুনঃসঞ্চারণ ঘটাচ্ছে মাত্র দুই কি তিন মাস। কিন্তু ফারাক্কায় গঙ্গার পানি প্রত্যাহার শুরু হওয়ার আগে আশপাশের ভূগর্ভস্থ পানি স্তরগুলো গঙ্গা থেকে অধিকতর সময় ধরে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি লাভ করত। এর অর্থ ফারাক্কা বাঁধ চালু করার পর গঙ্গানির্ভর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি শুকিয়ে আসছে, যে কারণে গঙ্গানির্ভর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের বিদ্যমানতা হ্রাস পাচ্ছে। এর বিপরীতে আমরা কেবল একই গীত গেয়ে যাচ্ছি।
সবারই জানা, হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। বাংলা ভাষায় যে বিষয় একটি প্রবাদ আছে ‘কানু বিনে গীত নেই’। কেবল প্রবচন নয়, এর সত্যতাও রয়েছে। পাশাপাশি এই প্রবচনের কপির পেস্ট প্রতিফলন স্পষ্ট আমাদের দেশের পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, ‘পানি নিয়ে ভারত বিনে গীত নেই।’ এক্ষেত্রে ফারাক্কা বাঁধ ইস্যু থেকে নেমে ৫৪ নদী, সেখান থেকে নেমে অতঃপর বহু বছর ধরে তিস্তাই যেন সব। অনবরত এক কথা বলার প্রবণতায় আক্রান্ত বিকারগ্রস্ত মানুষের সঙ্গেও অনেক মিল আছে। এমনকি মিলে যায় গঞ্জিকাসেবীদের সঙ্গেও। রসিকজন যেমন গাঁজায় বুঁদ হয়ে একটি কথাই বলে, ‘ভোম ভোলানাথ!’ আমাদের কর্তাদের অনেকেই বলেন, ‘ওম তিস্তা!’ যেন পানি নিয়ে তিস্তা ছাড়া আর কোনো সমস্যাই নেই।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪। শিরোনাম ‘পানি সমস্যায় বাংলাদেশ