ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বদান্যতায় তার অফিসে আপ্যায়নে মানের ভিন্নতায় হিরো আলমের উচ্চারণ ‘এটা ঠিক না।’ এরই প্রতিধ্বনি করে অনেকেই বলছেন, প্রতিটি ইস্যুতে ডিবিপ্রধানের কথা বলাটা ঠিক নয়। আবার ‘এটা ঠিক না’—এ কথা নানা ক্ষেত্রেই বলা চলে।
কেউ বলেন। কেউ আবার বলেন না। কিন্তু সবারই বলা উচিত, বৈদেশিক কোনো ঘটনায় দেশ যখন সংকটের মুখোমুখি হয়, তখন মনগড়া কথা বলা একেবারেই ঠিক নয়। যেটি সমানে বলে চলেছে সাবেক শাসক দল বিএনপি। যেমন বিএনপি বলছে, সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বাংলাদেশিদের হতাহতের ঘটনা প্রসঙ্গে। এ বিষয়ে সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ সমালোচনা করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটি বলেছে, ‘সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ধৈর্য ও সংযম দেখানোর কৌশল সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ।’ ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এটি ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির’ বহিঃপ্রকাশ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সরকার জাতীয় সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার অনির্বাচিত বলেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহস পাচ্ছে না। বরং তাদের অপরিণাম দর্শিতার কারণেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল দেশে অবস্থান করে মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
সাবেক শাসক দল বিএনপিকে কে প্রশ্ন করবে, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সহিংস বিরোধের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশকে কি সেই সংঘাতে জড়িত করতে হবে? আর সেটা না করলেই তা হবে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি? বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, মিয়ানমারে যা চলছে, তা শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা বিষয় নয়। এর নেপথ্যে পরাশক্তির স্বার্থের খেলা চলমান, যা চলছে উইক্রেন ও গাজায়। চলছে ইরাক, লিবিয়ায়। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে মিয়ানমারের খেলার মাঝে ‘ইয়া আলী’ বলে বাংলাদেশের ঝাঁপ দেওয়া কি সাহসিকতা? নাকি আগুনে পতঙ্গের ঝাঁপ দেওয়ার মতো কর্ম—সেটি কিন্তু বিএনপির বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
আর শুধু এই ইস্যুতে নয়, সব বিষয়ই কথা বলছে বিএনপি। তা ‘আব্বাসের সঙ্গে গাবগাছ’ ছন্দ মিলানোর মতো হলেও! এ নিয়ে আমজনতার মধ্যে বিরক্তির নানা প্রশ্ন ওঠে। যেমন প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান কীসের ভিত্তিতে কারাগারে সমকামিতা নিয়ে ডা. সাবরিনার বক্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে কি তার কোনো বাধ্যবাধকতা আছে? আরও প্রশ্ন আছে, কোনো বিতর্কিত আলোচনার মাঝখানে কেনই বা বারবার প্রবেশ করতে হবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানকে! অনেক হয়েছে, তিনি থামলে ভালো লাগে। যেমন ভালো লাগে, ‘হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা’—গোছের কথা বলা থেকে মন্ত্রীরা বিরত থাকলে। জনতা চায়, আগে করেন! বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, বিদেশি ঘোরে থাকা বিএনপিকে বোকা বানিয়ে ৭ জানুয়ারি পুলসিরাত পার হওয়াই কিন্তু শেষ কথা নয়! অনেক কিছু আছে সামনে। তা হতে পারে নিকটেও, বিশেষ করে ডলার সংকট!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শিরোনাম, ‘ডা. সাবরিনা এবং ডিবিপ্রধান