অগ্নিকান্ডের ঘটনা থামছেই না। এখানে সেখানে আগুন প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সভ্যতার ভিত্তি আগুনে আমাদের ধ্বংস ধারা হয়তো চলতেই থাকবে। ধারাবাহিক ঘটনাবলি সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে এর পেছনে বাণিজ্য ধারা বহমান।
বস্তির আগুন দিয়েই শুরু করা যাক। ঘন ঘন বস্তিতে কেন আগুন লাগে? এ নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়। কিন্তু অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে জমি দখল। এক সময় খালি পড়ে থাকা জমিতে ছিন্নমূল মানুষ বসতি গড়ে তোলে। তা হতে পারে সরকারী অথবা ব্যক্তি মালিকানার। এর পেছনে থাকে গডফাদার। বস্তির খুপরি ঘরের ভাড়ার হার অভিজাত এলাকার চেয়ে কমকিছু নয়। আবার এ বস্তিকে ঘিরে বিকশিত হয় বিদ্যুৎ-পানি-মাদকসহ নানা ধরনের ব্যবসা। এনজিও ব্যবসায়ও পালে হাওয়া পায়। এদিকে বস্তি গড়ে ওঠা জমির দাম যখন আকাশছোঁয় তখনই ব্যবসা অন্যদিকে মোড় নেয়। নেপথ্যের মাফিয়ারা সক্রিয় হন। এবং বস্তিতে আগুন লাগে! এটি গোপন অথবা নতুন কিছু নয়। একটু খাপছাড়া শোনালেও এটিই বাস্তবতা।
বস্তি ছাড়াও অন্য সব অগ্নিকান্ডের আগে-পড়েও কিন্তু বানিজ্য চলে বলে নানানজনের ধারণা। একটি বাংলা সিনেমার নাম আছে, গলি থেকে রাজপথ। তেমনই আগুনের ব্যবসা চলে বস্তি থেকে রাজ পর্যায়ের ভবনেও। আর ব্যবসা চলে বলেই, হঠাৎ হঠাৎ আগুনের ঘটনার অবসানের প্রত্যাশা আসলে বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। প্রথমত, যত আগুন লাগবে ততই আগুন নেভানোর কাজে সরকারি বরদ্দ বৃদ্ধি এবং দ্রুত ছাড় পাওয়া সহজ হয়। এবং কেনাকাটা আর সরকারি টাকার ওপর যে হারে ব্যবসা হয় তা আর কোনো ব্যবসায় কল্পনা করা অনুচিত। তবে মাদক ব্যবসার কথা আলাদা। আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে আগুন ব্যবসার এক ধরনের মিল আছে। আগুনের ঘটনা যত বাড়বে ততই এটি নিয়ন্ত্রণের বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়। একইভাবে মাদকের আগ্রাসন যত ঊর্ধ্বমুখী হবে ততই এটি নিয়ন্ত্রণের নামে সরকারি বেশি বরাদ্দ পাওয়া যাবে। সঙ্গে সাইড বিজনেস হিসেবে বাড়ে মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। যেমন ফায়ার সার্ভিসে যারা চাকরি করেন তাদের অনেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাইভেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অবসরে যাওয়ার পর তারা প্রকাশ্যে আসেন। একশ্রেণির আমলার মতো।
পুরো মেয়াদে সরকারি চাকরি করার সময় জনভোগান্তি সৃষ্টির যথেষ্ট কসরত করার ধারায় থেকে অবসরে যাওয়ার পর ‘জনসেবায়’ রাজনীতিতে নেমে পড়েন। এরাই আসলে রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে থাকেন। অবশ্য গুটিকয়েক আছেন যারা অন্যরকম চেতনায় রাজনীতিতে আসেন। এই অন্য চেতনায় রাজনীতিতে আসা ব্যক্তিরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেন বলে মনে হয় না। এ ব্যর্থতার মনুমেন্ট উদাহরণ হয়ে আছে পুলিশের সাবেক এক আইজি। এরপরও আর একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আড্ডা সূত্রে চিনি, যিনি আগাম অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে নামতে চান। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য, এটা তার মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। প্রমোশনবঞ্চিত এ পুলিশ কর্মকর্তাকে কে বুঝাবে, যে অবস্থা বিরাজমান তাতে কমিটমেন্টের তাড়নায় রাজনীতিতে এলে দুরবস্থা অনিবার্য। কারণ বিরাজমান বাস্তবতায় রাজনীতির নেপথ্য ধ্যানজ্ঞান হতে হবে বানিজ্য। কারণ সবকিছু ছাপিয়ে বানিজ্য ধান্দা আগুন পর্যন্ত পৌঁছেছে। অগ্নিকান্ডের একেকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ব্যবসা চলে। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদফতর। কেবল এ দুটি নয়, সরকারি সব সংস্থাই অদৃশ্য ব্যবসায় জড়িত।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ২১ মার্চ ২০২৪,
শিরোনাম “আগুন রহস্য : যেসব প্রশ্ন জনমনে