দেশে অনেক অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে। যা অকল্পনীয় উন্নয়ন হিসেবে দৃশ্যমান। পাশাপাশি মনে করা হয়, সুশাসনের বিষয়টি সবচেয়ে অবহেলিত আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো রাজনীতির দৈন্যদশা। সাধারণভাবে রাজনীতিকরা শক্ত অবস্থানে নেই বলে আমলাতন্ত্র অধিকতর গুরুত্ব পায়, আশকারাও বলা চলে। একে আরও জটিল করে তুলেছে রাজনৈতিক গুমোট অনিশ্চয়তা।
দেশ পরিচালনায় সরকার শক্ত অবস্থানে থাকলেও ‘কখন কী হয়’ এরকম একটি ধারণা সাধারণের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে, অথবা কৌশলে সংক্রমিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুঁজি হচ্ছে, আমেরিকার জুজুর ভয়। যাকে ভিত্তি দিয়েছে আমেরিকার ওপর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অতিনির্ভরতা। যদিও এ থেকে সাবেক শাসক দলটির কোনো ফায়দা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু রাজনৈতিক বিভাজনের ধারায় জনগণ ও গণতান্ত্রিক ধারার আস্থা রাখার সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। অথচ সামরিক শাসনের ধকল কাটিয়ে ১৯৯১ সালে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল এরশাদের আধাসামরিক সরকারের অবসান হওয়ার পর সবকিছু ঢেলে সাজিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার বৈরিতায় আশার প্রদীপ সর্বনাশা অগ্নিতে পরিণত হয়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির গণতান্ত্রিক রীতিনীতিবিরুদ্ধ প্রবণতার জনগণনির্ভর রাজনৈতিক ধারা দুর্বল হয়েছে ক্রমাগত।
এদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সর্বনাশা পটপরিবর্তনে রাজনীতির ধারায় যে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে, সেটিই আবার ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা হয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে। এ ঘটনায় আবার অকাট্যভাবে প্রমাণিত, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে বিনাশ করা হচ্ছে ৭৫-এর থিঙ্কট্যাঙ্কের একমাত্র এজেন্ডা। ফলে গণতান্ত্রিক ধারা বিকশিত করার ক্ষেত্রে সমঝোতার রাজনীতির পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায়।
আরও পরিষ্কার করে বললে, অনেকেরই ধারণা দেশের রাজনীতিতে একটি মাত্র কবর রচিত হওয়ার মতো পরিবেশ হয়েছে। এই কবরে যাবে, হয় ৭১ বিজয়ী পক্ষ অথবা পরাজিত শক্তি। নির্বাচন বর্জনের ধারায় ৭১-এ পরাজিত শক্তি প্রায় কবরের কিনারে পৌঁছে। কিন্তু এ শক্তিকে ক্রোরামিন দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অনেকেই বলছেন। এ ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক পশ্চিমা বিশ্ব। নানানভাবে সরকারকে চাপে রাখা হচ্ছে। এতে জোর হাওয়া লেগেছে রাজনীতির বিভাজনে। আর বিরোধী পক্ষকে মোকাবিলায় কঠোর পথে হাঁটে সরকার। ফলে আশকারা পায় আমলাতন্ত্র। আর বাতাস পায়, ‘কখন কী হয়’- প্রচারণা!
দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২২ মার্চ ২০২৪। শিরোনাম, “লেজে কুকুর নাড়ে!”