দখিনের সময় ডেস্ক:
ছিনতাই ও ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার ৭১ টিভির রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন বলেন, ঘটনাস্থলে তিন থানার পুলিশ এসে একে অন্যের এলাকা বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হলাম। অল্পের জন্য রক্ষা পেলাম প্রাণে। একাত্তর টিভির দুটি গাড়ি থেকে লুট করা হয়েছে দুই সহকর্মীসহ তিনজনের টাকা, মানিব্যাগ ও পরিবারের জন্য কেনা ঈদের নতুন পোশাক। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, তিন থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিজের এলাকা নয় বলে দ্বায়িত্ব এড়িয়ে কেউ কোনো ব্যবস্থাও নিলো না। সাংবাদিক হয়ে যদি পড়তে হয় এমন পরিস্থিতিতে তাহলে বাকিদের অবস্থা একবার ভেবে দেখবেন কর্তারা। ৭১ টিভির গাড়ী চালক মাহবুবের প্রশ্ন, সাংবাদিকদের জন্যই যদি পুলিশের এই আচরণ, তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হয়? তিনি বলেন, এখন বিচার পেতে কোথায় যাবো? এ প্রশ্ন আসলে সকলের!
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং এলাকায় ৭১ টিভির গাড়ি টার্গেট করে হামলা করে ৭/৮ জনের সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দল। লুট করে নেয় নগদ টাকা, মোবাইল, ঈদ উপলক্ষ্যে পরিবারের কেনাকাটার পোশাকসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। বাধা দেওয়ায় ও ক্যামেরায় ছবি তোলার চেষ্টা করায় রেললাইন থেকে পাথর নিক্ষেপ করে ছিনতাইকারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭১ টেলিভিশনের গাড়ি। পাথরের আঘাতে আহত হন রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, ঘটনাস্থল উল্লেখ করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলেও তিন থানার কোনো থানা দায় নিতে চায়নি। ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানা পুলিশের মোবাইল টহল পার্টি ঘুরে গেলেও দায় নেয়নি। অন্য থানার অধীনে বলে চলে যায়।
ছিনতাই ও ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন দৈনিক দখিনের সময়কে জানান, বুধবার রাত সোয়া দুইটার দিকে ৭১ টিভির গাড়ি বারিধারা অফিস থেকে দুজন ভিডিও এডিরটকে ধানমন্ডি নামিয়ে দিতে যাচ্ছিল। রাত আড়াইটার পরপর কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ালে ৭১ টিভির গাড়ির চালক মাহবুবের গলায় খুর ঠেকিয়ে তার মানিব্যাগ নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে হামলা করে ছিনতাইকারীরা। তিনি বলেন, আমি নাইট ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে ক্যামেরাম্যানসহ ঘটনাস্থলে যাই। এসময় ছিনতাইকারীরা সংঘবদ্ধভাবে ইট পাথর নিক্ষেপ করে। ক্যামেরাম্যান খোরশেদ আলমকে জিম্মি করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় উপর্যুপরি কিল ঘুষি মেরে যখম করে তাকে। তিনি বলেন, হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের সহযোগিতার জন্য গেলে সন্ত্রাসীরা গাড়িতে থাকা টাকা ও ঈদের জন্য সদ্য কেনা পোশাক ছিনতাইকারীরা লুট করে নিয়ে যায়। এরপর ঘটনাস্থলে তিন থানার পুলিশ এসে একে অন্যের এলাকা বলে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায় তিন থানার পুলিশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ৭১ টিভির রিপোর্টার ইশতিয়াক ইমন বলেন, খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে তেজগাঁও থানা পুলিশ আসে। তারা এসে জানায় এটা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এলাকার অধীনে। আর শিল্পাঞ্চল থানা বলছে এটা হাতিরঝিলে পড়েছে। আর হাতিরঝিল বলছে এটা তাদের এলাকা নয়।
উল্লেখ্য, মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেল ক্রসিং এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে দিনে-দুপুরেই। রাত হলে তো কথাই নেই। অথচ অধিকাংশ ঘটনায় দায় নিতে চায় না সংশ্লিষ্ট এলাকার তিন থানা পুলিশ। এদিকে অভিযোগ আছে, এই এলাকার মাদককারবারী ও ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে তিন থানাই নিয়মিত ‘নজরানা’ আদায় করে।