বাঁচতে হলে পানি পান করতেই হবে। এটি সব প্রাণীর জন্য সত্য। জীবজগৎ পানিনির্ভর। পানি ছাড়া পৃথিবী অচল। পানির প্রয়োজন সবার। তবে এ প্রয়োজনের মাত্রা ভেদ আছে। আছে উৎসের পার্থক্য। আছে রকমফের। গাধা ও ঘোড়া একই ধরনের পানি পান করে না। আবার অনেক জীব নির্দিষ্ট উৎসের পানি পান করে থাকে। এদের মধ্যে চাতক পাখি বিশেষভাবে আলাদা। এরা বৃষ্টির পানি ছাড়া অন্য কোনো উৎসের পানি পান করে না। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে।
উৎস অথবা ধরন যাই হোক, বাঁচতে হলে পানি চাই-ই চাই। এদিকে পানির সঙ্গে প্রাণী যেমন, তেমনই ক্ষমতার সঙ্গে রাজনৈতিক দলকে মেলানো যায়। সোজা কথা, ক্ষমতা ছাড়া রাজনৈতিক দল বাঁচে না, চলেও না। যেমন গান আছে না—‘লাইন ছাড়া চলে না রেল গাড়ি।’ তবে বাঁচা এবং চলার বিষয় অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। একই কথা সত্য রাজনীতির ক্ষেত্রেও। যে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সাবেক ক্ষমতাসীন দল বিএনপি। আবার চাতক পাখির সঙ্গে বিএনপির অন্যরকম মিলও আছে। চাতক এটি কোকিল গোত্রের পাখি। এরা বাসা বাঁধে না। ডিমে তা দেয় না। ছানাও লালনপালন করে না। বসন্তকালে ডিম পাড়ে ছাতারে পাখির বাসায়। ছাতারে নিজের ডিম ভেবে তা দেয়, ছানা বড় করে। একসময় ছাতারে বুঝতে পারে এই ছানা তার নয়! তখন ছানাগুলোকে তাড়িয়ে দেয়। ততদিনে শিশু চাতক পাখি উড়তে শিখে যায়। বিএনপির জন্মধারাও অনেকটা এরকম। ’৭৫-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক এই দলের ডিম পেরেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বেশ জোরালো আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। এ ধারায় মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন বর্জন করে দলটি। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে হোমিওপ্যাথিক ধরনের লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেয়। নির্বাচনের পর বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে রাজধানীসহ সারা দেশে। যেন শবযাত্রা। ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন বর্জন থেকে কোন রাজনৈতিক অর্জন হয়েছে বিএনপির? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের তেমন কোনো সুযোগ থাকে না।
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২২ এপ্রিল ২০২৪, শিরোনাম, “রাজনীতিতে চাতক পাখির গন্তব্য কোথায়”