বিএনপি যে লক্ষ্যের কথা বলছে, সেটি অর্জন করা দুরূহ। যদিও এখনো বিএনপি তোতা পাখির মতো বলেই যাচ্ছে, ভোট বর্জন করে আন্দোলনের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। বিশ্বাস করুক আর নাই করুক, নেতারা জোর দিয়ে বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতিই বিএনপির সবচেয়ে বড় সাফল্য। এর সঙ্গে আরও বলা হচ্ছে, নতুন নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে সফল আন্দোলন করা হবে। কিন্তু কবে?
এ ক্ষেত্রে মাঠের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি, কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর কথা বলছেন বিএনপির নেতারা। এদিকে দলটির আন্দোলনে সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে দলের মধ্যে নানা মূল্যায়ন যেমন চলছে, তেমনি সংশয় আছে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে বলে দাবি করা হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। কম ভোটার উপস্থিতি ছাড়া বিএনপির এ আন্দোলনে প্রাপ্তি তেমন কিছু নেই। আর এটিকে সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এর সাফল্যের মেয়াদ রংধনুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আবার কারও কারও মতে, বিএনপি আসলে ক্ষমতাসীনদের ফাঁদে পা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ চায়নি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। এজন্য হয়তো বিএনপির কাউকে গোপনে ম্যানেজও করা হয়েছে। সবাই জানেন, রাজনীতিতে বেচাকেনা ওপেন সিক্রেট বিষয়। বিএনপিতে বিক্রিযোগ্য নেতার সংখ্যা অন্যান্য দলের তুলনায় অনেক বেশি। সামগ্রিক বাস্তবতায় বিএনপি ঘুরপাক খাচ্ছে বর্জন-গর্জনের কেন্দ্রে!
কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলেন, বিএনপির এখন রাজনৈতিক মরণদশা চলছে। তবুও বিএনপি বিদেশের দিকে কাতরভাবে তাকিয়ে আছে। চাতক পাখি যেমন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে একসময় গলা শুকিয়ে গরম হয়ে যায়। চাতক তখন বৃষ্টির জন্য চিৎকার করতে থাকে। তবুও বৃষ্টি হয় না! এ প্রসঙ্গে মিথ আছে, বৃষ্টির আশায় চিৎকার করতে করতে চাতকের গলা দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়।
বিএনপির গলা দিয়ে কী বের হচ্ছে? চাতক পাখি মৃত্যুর সময় পিঠ মাটিতে ঠেকিয়ে, পা দুটো ওপরের দিকে তুলে, ঠোঁট হাঁ করে এবং চোখ খোলা অবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়ে মারা যায়! মরণদশায়ও কি চাতক পাখি বৃষ্টির পানির প্রত্যাশা করে? বলা কঠিন। যেমন বলা কঠিন, রাজনৈতিক মরণদশায়ও কি বিএনপি বিদেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসবে?
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২২ এপ্রিল ২০২৪, শিরোনাম, “রাজনীতিতে চাতক পাখির গন্তব্য কোথায়”