Home শীর্ষ খবর সেতু টোলপ্লাজায় ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত

সেতু টোলপ্লাজায় ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত

দখিনের সময় ডেস্ক:
ঝালকাঠিতে গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাক-প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ঈদের পরে গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় এ ঘটনা ঘটে। ‍এ ঘটনায় একই পরিবারের ৬ জনসহ ১৪ জন নিহত হন। খুলনা থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে পাশে থাকা তিনটি অটোরিকশার ওপর গিয়ে পড়ে। আহত হন ২০ জনের মতো। ঈদযাত্রার আলোচিত এ দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খবর সূত্র: ইত্তেহাদ নিউজ।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স ও বাসের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাকে ওভারলোড, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না দেওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান কারণ হিসেবে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতি দায়ী করা হয়েছে। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল। এ ছাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।
অন্যদিকে যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগেই গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোলপ্লাজা, গতি কমান’ এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়। টোলপ্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে, যার ফলেই ঘটে এ দুর্ঘটনা।
ড. আরমানা আরও বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছুটা দূরত্ব পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান ব্রিজটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দুই পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি। সড়কের দুই পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।
ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক সেখানে গড়ে উঠেছে নানা অবকাঠামো। গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। এ ছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটিও ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল। এ ছাড়া ঝালকাঠির সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল। এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডার গান ছিল না।
তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এতে সড়কের যেসব অংশে দুই পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে। আঞ্চলিক সড়কগুলোর দুই পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ওই সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের এআরআইর সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক  বলেন, আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয় না। এ ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামোগত ত্রুটি দূর করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

সন্তানের অত্যাচারে শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যা

দখিনের সময় ডেস্ক: সৈয়দ আলী আকনে (১০৪) নামের এক শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিষপানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সৈয়দ আলী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী...

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সিইসি

দখিনের সময় ডেস্ক: নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন করতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা দরকার। সবার সহযোগিতা...

বিশাল নিয়োগ আসছে, ক্যাডার ১২ হাজার ৭১০ এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯

দখিনের সময় ডেস্ক: পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে পাঁচ...

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে অটোরিকশা সমস্যার সমাধান হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দখিনের সময় ডেস্ক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ব্যাটারিচালিতঅটোরিকশার চলাচল বিষয়ক সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার...

Recent Comments