প্রায় ১৮ বছর ধরে মসনদ বলয়ের বাইরে থাকা বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী হামলা-মামলা, কারাভোগ, নির্যাতনের পরও দল আঁকড়ে আছেন। এরা বিশাল এক শক্তি। কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ এই কর্মী শক্তিকে কি বিএনপি কাজে লাগাতে পারছে, পারবে? ঢাকার বাইরে বিএনপি যখন সমাবেশ করেছে, তখন দেখা গিয়েছে বাধা-বিপত্তি ডিঙানো জনস্রোত। চিড়া-মুড়ি হাতে দুই-তিন দিন আগেই হাজির হয়েছে মানুষ। মিডিয়ার সামনে দলটির সমর্থকদের দৃঢ়চেতা বক্তব্য। এর সঙ্গে নীরব সমর্থকদের অবস্থান তো রয়েছেই। কিন্তু চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে ভেঙে পড়েছে বিএনপির আন্দোলন। আর ২৮ অক্টোবর বিপর্যয়ের চোরাবালিতে আটকে পড়া বিএনপি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে। কিন্তু বিপর্যয় বিএনপি থেকে দূরে থাকেনি। এদিকে সরকার এগিয়েছে কূটচালের চেনা ছকে। বিএনপির জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব দুয়ারে কাঁটা দিয়েছে। ভাইরে হাতে রাখি বাঁধার সময় যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়ার মতো।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ২৭ জানুয়ারি প্রথম বড় কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। তবে তাতে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, আন্দোলনের নামে বলপ্রয়োগের রাজনীতিতে হীনবল হয়ে পড়েছে সাবেক শাসক দলটি। এ ব্যর্থতা নিয়ে দলটির ভেতরে বাইরে নানা আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, নির্বাচন বা কর্মসূচি কোনো ক্ষেত্রেই জুতসই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। আন্দোলনে কোনো প্ল্যান-বি আছে বলে প্রমাণিত হয়নি। শুধু একটি বল গোলবারে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গোলবারের কাছাকাছি নিয়েছেও একাধিকবার। কিন্তু শেষতক আর মকসুদ পূরণ হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিএনপিতে স্টাইকার নেই।
বিদেশনির্ভরতায় বিএনপির বলটি বারবার মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছে। বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে বিএনপি একই মুলার পেছনে ছুটছে। নয়াপল্টনের হুঙ্কার কিংবা বাজারে লিফলেট বিতরণ কাজে আসছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো যায়নি বা তারা মাঠে নামেননি। ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মীর হাস্যকর কিছু মিছিলও হয়েছে। এদিকে হাজার হাজার নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়িয়েছে। দলটির ইউটিপিয়ান নেতাদের ধারণা ছিল, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সর্বোচ্চ কঠোর হবে এবং প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনী ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ তরিকায় ব্যাক গিয়ারে চলবে। কিন্তু এ হিসাব আর মিলছে না। ফলে রবিঠাকুরের ছুটি গল্পের ফটিকের দশায় আছে বিএনপি।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনে বিএনপি যে জনপ্রিয় দল, তা প্রমাণে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই দলটির সামনে। কিন্তু নির্বাচনের ট্রেনও তো এখন অনেক দূরে। আর যদি হঠাৎ কোনো প্রলয় ঘটেও, তাতে বিএনপির কোনো লাভ হবে না। কারণ, অন্ধ হলে যেমন প্রলয় বন্ধ থাকে না, তেমনই প্রলয় হলে তাতে অন্ধের কোনো লাভ হয় না। জয়-পরাজয় খেলোয়াড়ের জন্য, পরনির্ভরশীলের জন্য নয়!
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২২ এপ্রিল ২০২৪, শিরোনাম, “রাজনীতিতে চাতক পাখির গন্তব্য কোথায়”