বিশেষ প্রতিনিধি:
গুলশানের অভিজাত ফ্লাটের সিলিং ফ্যান থেকে মুনিয়ার মরদেহ নামানো হয় ২৬ এপ্রিল রাতে। এবং ওই রাতেই তার বোন নুসরাত আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। প্রশ্ন উঠেছে, মুনিয়ার যে আত্মহত্যা করেছে তা কীভাবে বাদি নিশ্চিত হলেন? আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করার জন্য এতো তাড়াহুরো কেন?
এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে উঠেছে যখন মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন কিছু ব্যাক্তি তার বোনকে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন এবং তিনি চট্টগ্রামের সাবেক হুইপ পুত্র শারুনের নাম উল্লেখ করেছেন।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্লাটে মৃত্যু হয় মুনিয়ার। এ মৃত্যুর পরপরই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত গুলশান থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপরে এমডিকে একমাত্র আসামী করা হয়েছে। কিন্তু একাধিক আইনজীবী ও আইনজ্ঞের অভিমত এবং সুপ্রিম কোটের আত্মহত্যার প্ররোচনার বিভিন্ন রেফারেন্স মামলায় দেখা গেছ, মুনিয়ার মৃত্যুতে যে আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা করা হয়েছে তা আইন সংগতভাবে করা হয়নি। আইনের রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়নি। সে কারেণ আইনের দৃষ্টিতে এই মামলাটি অবৈধ এবং বেআইনি বলে মনে করছেন একাধিক আইনজ্ঞ।
সুপ্রিম কোর্টের একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার রেফারেন্সে বলা হয়েছে, মামলা করতে হবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর। অনেক সময় হত্যাকান্ডকেও আত্মহত্যা বলে চালনো হয়। সেজন্য আত্মহত্যা করেছেন- এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা দাখিল করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় কেন একজন মানুষ কীভাবে প্ররোচিক হবেন সে ব্যাপারে ৫ টি বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার বিবচনায় নিতে হবে।
১. শেষ কথা কার সাথে হলো:
আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় একটি বিষয় সুপ্রিম কোর্ট উপজিব্য মনে করছে শেষ কথা কার সাথে হলো। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন ব্রঞ্চ এই অভিমতে পৌছেছেন, শেষ কথা কার সঙ্গে হলো এবং এই অভিমতের ভিত্তিতেই শেষ কথা আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার একটি তথ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু এখন মুনিয়ার কললিস্ট এবং অন্যান্য যোগোযোগ উপায়গুলো খুঁজে দেোগেছে মুনিয়ার শেষ কথা বসুন্ধরা এমিডর সাথে হয়নি, অন্য কারও সাথে হয়েছে।
২. ডেথ নোট:
হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়ে এটাও বলা হয়েছে, আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় ডেথ নোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি ডেথ নোটে কারও নাম উল্লেখ করা থাকে তাহলে তিনি এই মামলায় অভিযুক্ত হতে পারেন। ডেথ নোটটি হতে হবে আত্মহত্যাকারীর শেষ লেখা। অতীতে আবেগপ্রবন হয়ে তিনি কি লিখেছেন আবার স্বাভাবিক জীবনে এসেছেন, সেটি বিবেচ্য বিষয় হবে না। ডেথ নোট হলো মৃত্যুর পূর্বে লেখা এবং এর পরে তিনি আর কোনেকিছু লেখেননি। কিন্তু সেরকম কোনো ডেথ নোট মুনিয়ার আত্মহত্যার পর পাওয়া যায়নি।
৩. শেষ সাক্ষাৎ কার সাথে:
মনিয়ার এই আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুুনিয়া শেষ সাক্ষাৎ কার সঙ্গে করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে যাকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সাথে মুনিয়ার দীর্ঘদিন সাক্ষাৎ ছিলো না।
৪. কোনো চাপ:
একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় এটি হলো সবচেয় বড় বিষয়। এটি প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং পারিপাশ্বিক চাপ হতে পারে। এই চাপগুলো যখন থাকবে তখন সেটি তদন্ত করার দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। কোনো বাদি নিশ্চিতভাবে আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী হিসাবে কাউকে চিহ্নিত করতে পারবেন না।
৫. আসামির নাম কেন?:
আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় যখন কোনো ডেথ নোট থাকবে না, আত্মহত্যাকারীর সুনির্দিষ্ট বয়ান থাকবে না, পারিপাশ্বিক অবস্থা থাকবে না বা কোনো সাক্ষাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকবে না তখন আত্মহত্যা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করার বিধান নেই। তখন আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় আসামি করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত সাপেক্ষে। আর সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আইনজীবিদের অভিমত, মুুনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য, কাউকে খুশি করার জন্য বা কাউেক ব্লাকমেইলিংয়ের জন্য করা হয়েছে।