দখিনের সময় ডেস্ক:
আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রপাত বেশি ঘটে থাকে। গ্রীষ্মে এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ রকম পরিস্থিতির তৈরি হয়। তাঁদের মতে, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে—এমন এলাকায় তৈরি হওয়া মেঘে বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি।
প্রতিবছর পৃথিবীতে বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। পৃথিবীর যে কয়টি অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ, তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। আবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত গত ১০ বছরে (২০১০-২০২০/জুন) বজ্রপাতে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৫২৬, নারী ৪০১ ও পুরুষ ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে কম মোট ১২৩ জন আর ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫০ জন নিহত হন। বাকি বছরগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০–এর মধ্যে এই সংখ্যা ওঠানামা করে।
নেপালের তরাই, ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। বিহারে জুনের শেষ ১০ দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৪৭ জন। মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে হিসাব করলে, এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২১৫। এঁদের মধ্যে আছেন কৃষক, শ্রমিক এবং গো-পালক। একইভাবে উত্তর প্রদেশে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২০০ জনের। গত ২৭ জুন শনিবার বিকেলে এক দিনে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন আরও অন্তত ২৯ জন। নেপাল বলছে, বন্যা বা পাহাড়ধস বা ভূমিধস নয়, এখন সেখানে বেশি মানুষ মরছে বজ্রপাতে। গত চার বছরে সেখানে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৯৩০ জন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ ফারুখ বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর থেকে আসা গরম আর আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে উত্তর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। তিনি লক্ষ করেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি।
শীতের শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়। এ থেকে তৈরি হয় বজ্রমেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এ রকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।