Home শীর্ষ খবর রনো ভাই রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেননি

রনো ভাই রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেননি

ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক বিশ্বাস ও সম্পৃক্ততার সূত্রে বাম রাজনীতিকদের বিষয়ে বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ লালন করে আসছি। এ ধারায় আশি-একাশি সালে পেশাগত জীবনের সূচনালগ্নে বাম নেতাদের সঙ্গে তুলনামূলক সম্পৃক্ততা একটু যেন বেশিই ছিল। কিন্তু সেই সময় রনো ভাইয়ের সঙ্গে যে কারণেই হোক পরিচয় হয়নি। তাকে আমি যেটুকু চিনতাম তা দূর থেকে চাঁদ দেখার চেয়ে বেশি কিছু নয়। এ ছাড়া স্বল্পভাষী এবং অনেকটা নিভৃতচারী রনো ভাইয়ের সঙ্গে তখনো ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি যখন তাবৎ বাম-ডান নেতাদের সঙ্গে আমি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম।
হয়তো রনো ভাইয়ের বিষয়ে আমি খুবই কম জানতাম। অথবা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য তেমন সুপ্রসন্ন ছিল না। এ অবস্থায় একদিন ’৯১-এর বিএনপি সরকারের মন্ত্রী আকবর হোসেনকে দুপুরের দিকে তার অফিসে দেখলাম খুবই ব্যস্ত; যা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ। জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, দৌড়াদৌড়ি করেন কেন? তিনি বললেন, ‘রনো ভাই আসতেছে!’ বললাম, তাতে আপনার অস্থির হওয়ার কী আছে? তিনি বললেন, ‘আরে বুঝবা না! তার কাছে রাজনীতি শিখেছি। সে প্রথম আমার অফিসে আসবে। তার একটা সম্মান আছে না। সম্মান ছাড়া তাকে তো “অন্য কিছু ধরানো” যাবে না!’
মন্ত্রী আকবর হোসেনের এই ‘অন্য কিছু ধরানো’ শব্দটির মাজেজা তখন বুঝিনি। বুঝেছি অনেক পরে, দেখেছিও। ডান-বাম অনেক নেতাকে আকবর হোসেন আর্থিক সহায়তা করতেন। এ সহায়তাভোগীদের এক দলের এক নেতা হিসেবে পরিচিত এমন বাম নেতারাও ছিলেন; যারা শেখ হাসিনার ডান সরকারের মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু রনো ভাই কখনো বাম থেকে ডানে যাননি। মতভেদের কারণে দল ভেঙেছে, মতভেদে ভেঙেছে সংসারও। কিন্তু রনো ভাই তার রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেননি, একই প্রবণতায় রাজনীতি ও জীবন কাটিয়েছেন। একই প্রবণতায় থেকেই অবশেষে ১০ মে চলে গেছেন অনন্ত পরপারে।
রনো ভাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা হায়দার আকবর খান রনো জন্মেছেন ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট। তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। মার্কসবাদী এ তাত্ত্বিক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন ছিলেন। কিন্তু ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে ওয়ার্কার্স পার্টি ত্যাগ করে সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তিনি সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। পরে তাকে করা হয় উপদেষ্টা। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাম রাজনীতির ধারায়ই থেকেছেন। গোপনে অথবা প্রকাশ্যে অন্য ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। অথবা আকবর হোসেনের মতো দরাজ দিলের লোকও তাকে ‘অন্য কিছু’ ধরাতে পারেনি। হয়তো নিজস্ব রাজনীতির বিশ্বাসের বাইরে হাঁটতে অথবা অন্য কিছু ধরতে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। উল্লেখ্য, অত্যন্ত তুচ্ছ কারণে আমি তাকে অন্তত দুবার লজ্জিত হতে দেখেছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ১৬ মে ২০২৪, শিরোনাম, “রনো ভাইকে লজ্জিত হতে দেখেছি”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

Recent Comments