দখিনের সময় ডেস্ক:
উপকূলের রক্ষাকবজ সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত পর্যন্ত ৩৯টি মৃত হরিণ ও একটি মৃত বন্য শূকর উদ্ধার করা হয়েছে। শতাধিক মিস্টি পানির পুকুর নোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আর ৭০টিরও বেশি জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৭টি হরিণ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সুন্দরবনে বনবিভাগের ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বনবিভাগের জেটি, মিস্টি পানির পুকুরসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো। এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৪০টি বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ। এর মধ্যে ৩৯টি হরিণ রয়েছে। বনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এসব মৃতদেহ। মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত সোয়া ৮টার দিকে খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, রেমালের বিষয়ে আমরা পূর্ব থেকেই সতর্ক ছিলাম। যার কারণে মানুষের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে অবকাঠামোর বেশকিছু ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবন মায়ের মতো বুক পেতেই আমাদেরকে রক্ষা করে চলেছে। ঝড়ে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হলদে বুনিয়া, কচিকাটাসহ অভয়ারণ্যের ক্যাম্পগুলোর রাস্তা ভেঙে গেছে। পুকুর ডুবে গেছে, পাড় ভেঙে গেছে। বেশকিছু ক্যাম্পের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে লোকালয়ে ভেসে আসা বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, চুনকুড়ি নামক এলাকা থেকে ৩টি হরিণ উদ্ধার করা হয়। পরে হরিণগুলো সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছি অবমুক্ত করা হয়েছে।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙেছে অসংখ্য গাছপালা। সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের জেটি, মিস্টি পানির পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সুন্দরবনের বেশ কিছু জায়গা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চর, শেলার চর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনের টিনের চালা উড়ে গেছে। কটকা কেন্দ্রের কাঠের জেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বনকর্মী, জেলে বাওয়ালি ও বন্যপ্রাণীর জন্য সুপেয় পানির যে আধার ছিল, সেগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে লবণ পানি ঢুকে গেছে। সুন্দরবনের কটকায় সুপেয় পানির যে পুকুরটি ছিল সেটি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ওয়ারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছোট ছোট যে ট্রলারগুলো ছিল সেগুলো জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কাঠ ভেসে গেছে।