যে কোনো সমাজ ও দেশে দুর্নীতি আছে কায়ার সঙ্গে ছায়ার মতো। আর সীমা ছাড়ালে এটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ছায়া তখন কায়াকেই বিনাশ করে দেয়। বাংলাদেশ এ সমস্যার কবলে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির সংস্কৃতি সমাজকে ভিতর থেকে ক্ষয় করে দিচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যা, সীমিত সম্পদ, প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষার অভাব, নিজ স্বার্থকে অতি প্রাধান্য দেওয়ার উগ্র প্রবণতা, দুর্বল জবাবদিহিতা- বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দেশ যেন দুর্নীতির উর্বর জমিন।
রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী তথা সমাজের যারা অগ্রবর্তী অংশ হিসেবে বিবেচিত তাদের বৃহৎ অংশ নৈতিকতাহীন আদর্শচ্যুত এক কলুষিত ধারার কাছে জিম্মি বলে মনে করা হয়। ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ জীবনযাত্রার প্রতিটি স্তরেই দুর্নীতি জেঁকে বসে আছে। আর রাষ্ট্রের দ্বারা দুর্নীতি প্রদমিত হওয়ার পরিবর্তে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার ফল হয় ভয়াবহ। সামগ্রিক অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতির কাছে এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছে যে, একে অনেকটা কপালের লিখন হিসেবে মেনে নিয়েছে। ক্রমান্বয়ে দুর্নীতির ডালপালা ছড়িয়ে বিশাল বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। যার শিকড় বহু গভীরে বিস্তৃত এবং দৃঢ়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশে বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় দুটি সামরিক শাসনের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। সে সময়ে দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পেয়েছে। যার পালে জোর হাওয়া অব্যাহত ছিল অন্তত ২১ বছর। এরপরও এ ধারার অবসান হয়েছে- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। স্মরণ করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের প্রথম মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা খুব একটা কাজে এসেছে, এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। দুর্নীতির বেনো জলের বিস্তার অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। আর একেই ধরে নেওয়া হলো নিয়তি বলে। কিন্তু এবারের কোরবানির প্রাক্কালে ছাগলকান্ডে দুর্নীতির সাজানো বাগানে প্রচন্ড আঘাত লাগে। ছাগলকান্ডের পর দুর্নীতিবাজ আমলা-কামলা-পাইকপেয়াদা-নেতা-পাতা, সবাই আতঙ্কে আছেন। কখন ধরা পড়েন সেই ভয়ে তটস্থ দুর্নীতিবাজরা। এদের মধ্যে অন্তত ৭০ ভাগ কর্মকর্তা অযোগ্য। এ অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে কতটা মুক্ত করা যাবে তা কিন্তু এখনো একটি বড় প্রশ্ন হয়েই আছে।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ৮ জুলাই ২০২৪। শিরোনাম ‘দুর্নীতিবাজরা যেন ছাড় না পায়’